চুয়াডাঙ্গা থেকে : বাংলাদেশের ৩৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ মামুনুর রশিদকে নতুন জীবন দিয়েছে ভারতের ‘নির্মল হৃদয়’। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি তাকে চিকিৎসা, মানসিক কাউন্সেলিং দিয়ে স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। এরপর তাকে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশে তার পিতা মোহাম্মদ আবদুল করিমের কাছে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন টেলিগ্রাফ। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ঘটনা। নদীয়া সীমান্তের চাপড়া এলাকায় ভারতীয় অংশে একজন বাংলাদেশিকে দেখতে পায় বিএসএফ। তিনি এলোমেলো ঘোরাফিরা করছিলেন। তখন তার বয়স ৩৭ বছর। তিনি নিজের পোশাকটিও ঠিকমতো শরীরে রাখতে পারছিলেন না। তাও যেটুকু আছে, তা ছিন্নভিন্ন।
বিএসএফ তাকে আটক করে মাহাতপুর গ্রাম থেকে। এরপর ১লা নভেম্বর তুলে দেয় চাপড়া পুলিশের হাতে। এ পর্যায়ে দেখা যায় মামুনুর রশিদ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। তাকে পাঠানো হয় নকশীপাড়া এলাকার গালাদারিতে অবস্থিত মানসিক রোগ চিকিৎসা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান নির্মল হৃদয়ে। এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মোসলেম মুন্সি।
সেখানে দু’বছর চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং দেয়ার পরে তার স্মৃতি ফেরে। এরপর সম্প্রতি তাকে হস্তান্তর করা হয় বাংলাদেশে তার পিতা মোহাম্মদ আবদুল করিমের কাছে। রোববার ভারত-বাংলাদেশের গেদে সীমান্তে পিতা-ছেলের দু’বছর পরের সাক্ষাৎ এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে। দু’বছর পরে পিতা আবদুল করিমকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রশিদ। দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে থাকেন অনেকক্ষণ। তারপর একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদেন।
আবদুল করিম বলেন, ওর মা মারা যাওয়ায় প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে রশিদ। তার চরিত্রের মধ্যে অসংলগ্নতা দেখা দেয়। আমি তাকে ঢাকায় একজন মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু একদিন রাতে সে বাড়ি ছেড়ে যায়। তারপর আমি সব আশা হারিয়ে ফেলি।
তিনি বলেন, কখনো ভাবি নি আর কোনোদিন ওর দেখা পাবো। কিন্তু দু’এক মাস আগে মোসলেম ভাইয়ের কাছ থেকে আমি একটি চিঠি পাই। তাতে তিনি আমার ছেলে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এ খবর পেয়ে আমি বিস্মিত হই। যেন আকাশের চাঁদ পাই হাতে। মোসলেম ভাই একটি মহৎ কাজ করেছেন। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
নির্মল হৃদয় পরিচালনা করেন মোসলেম মুন্সি। তার তত্ত্বাবধানে দু’বছরে নতুন জীবন ফিরে এসেছে রশিদের মধ্যে। মোসলেম মুনসি বলেন, অনেকবার রশিদ আমার প্রতি সহিংস হয়ে উঠেছে। হামলা করেছে। তবে তার ওপর ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে এবং তাকে মনোবিজ্ঞানী দিয়ে কাউন্সেলিং দেয়ার ফলে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকে। তবে কিভাবে বাড়ি থেকে এসেছে, কিভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে, এর কিছুই বলতে পারে না রশিদ।
তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানী দেবাশীষ দাসগুপ্ত। তিনি বলেন, রশিদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ ছিল। তবে তা যেন আর কোনোভাবেই বৃদ্ধি পেতে না পারে সে জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন মোসলেম মুন্সি।
এমটিনিউজ/এসএস