জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা : থাই বারোমাসি আমাচাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার তেতুলিয়া গ্রমের নার্সারি মালিক আবুল কাশেম। অসময়ে আম উৎপাদন ভালো হওয়ায় তার দেখাদেখি ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এ এলাকার অন্য কৃষকরাও এখন আমচাষে ঝুঁকছেন।
বারোমাসি আম চাষ করে আবুল কাশেম কৃষকদের চাষাবাদ সম্পর্কে চিরায়ত চিন্তাধারাও বদলে দিয়েছেন। গাছে বারো মাস ধরে বলে এই আমের নাম রাখা হয়েছে বারোমাসি। আবুল কাশেম এ বছর ২০ বিঘা বাগান থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। আগামীতে এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন আবুল কাশেম। এছাড়া আমের পাশাপাশি তিনি এ বছর আড়াই লাখ বারোমাসি আমের চারা ৫ কোটি টাকায় বিক্রি করবেন বলেও দাবি করেন।
আবুল কাশেম জানান, ৩২ বছর আগে ১১ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তাতে নার্সারি তৈরি করেন তিনি। নার্সারি থেকে ফলজ, বনজ এবং ঔষধী গাছের চারা বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে তার সংসার চলতো। জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য তিনি ৮ বছর আগে আম চাষের পরিকল্পনা করেন। ঠিক ওই সময় তার এক আত্মীয় নূর ইসলাম থাইল্যান্ডে যান ব্যবসায়ীক সফরে। সেখানে তাদেরকে একটি আম বাগান পরিদর্শন করানো হয় এবং ওই বাগান থেকে পাকা আম পেড়ে খেতে দেয়া হয়।
সুমিষ্ট ওই আম খেয়ে ভালো লেগে যায় নূর ইসলামের। তিনি বাগান থেকে আমগাছের একটি ডগা ভেঙে ব্যাগে নেন। দেশে ফিরে ওই ডগাটি নার্সারি মালিক আবুল কাশেমকে দেন চারা তৈরির জন্য। সেই ডগা থেকেই চারা তৈরি করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন আবুল কাশেম।
পরের বছরই ওই গাছে ৮-১০টি আম ধরে। একে একে তিন বার আম ধরে গাছটিতে। পাকা আম খেতে অত্যন্ত সুমিষ্ট হওয়ায় আবুল কাশেম উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই চারা থেকে আবার কলম চারা তৈরি শুরু করেন।
নিজেদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি এলাকার কৃষকদের জন্য কিছু করার মানসিকতা নিয়ে আবুল কাশেম ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ওই থাই জাতের বারোমাসি কলম চারা দিয়ে উপজেলার বাঁকা গ্রামের মাঠে ৬ বিঘা এবং তেতুলিয়া গ্রামের মাঠে ১৪ বিঘা আমবাগান গড়ে তোলেন। ২ হাজার গাছ রয়েছে তার বাগানে। এছাড়া তার নার্সারিতে বিক্রির জন্য রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ বারোমাসি আমের চারা।
গত বুধবার আবুল কাশেমের আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রাই প্রতিটি আম গাছে থোকাই থোকাই মুকুল ধরেছে। আবার কোনোটাতে আমের গুটিও রয়েছে।
আবুল কাশেম জানান, ভালোভাবে জমি কর্তন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে আম চাষের উপযোগী করে তুলে প্রতি বিঘায় ১শ’ টি করে চারা রোপন করা হয়। চারা রোপনের ২ মাসের মধ্যেই গাছে মুকুল আসতে শুরু করে এবং ৪ মাসের মধ্যেই আম পূর্ণ পরিপক্ক হয়ে ওঠে। বছরে ৩ দফায় প্রতিটি আম গাছে ৩০ কেজি পর্যন্ত আম পাওয়া যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি আম পাইকারি ৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জমি তৈরি থেকে আম সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বিঘা জমিতে ৯০ হাজার টাকার আম বিক্রি করা সম্ভব। যা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয় ৫০ হাজার টাকা।
চলতি বছরে ইতোমধ্যেই তিনি ১৬ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন এবং প্রায় ৫ কোটি টাকার আমের চারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে আমচাষিরা আমের চারা কিনতে ভিড় করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, জাতটি আমাদের দেশে নতুন। আবুল কাশেমই এটি তৈরি করেছেন। এটি দ্রুত সম্প্রসারণযোগ্য একটি জাত। এ আম খেতে অত্যন্ত সুমিষ্ট। এ আম চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন।-জাগো নিউজ