মনিরুজ্জামান সুমন, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) : ফরহাদ হোসেন সোহাগ এলাকার মানুষ তাকে সোহাগ নামেই চেনে। লেখাপড়া শেষ করে অন্যান্য বেকার যুবকদের মতো চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নেমে পড়েন কৃষি কাজে। জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন ফলসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ। কিন্ত ভাগ্য যেন কোনো ভাবেই সহায় হচ্ছিলো না। যে চাষই করেছেন পড়েছেন লোকসানের মুখে।
বারবার লোকসানের মুখে পড়লেও কৃষির প্রতি আলাদা টান তাকে দমাতে পারেনি। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সোহাগ চলতি মরসুমে বৈরী আবহাওয়াকে মোকাবেলা করে দামুড়হুদার লোকনাথপুরস্থ ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশেই সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন কাশ্মীরি আপেল কুলের বাগান। প্রতিটি গাছেই শোভা পাচ্ছে লাল টুকটুকে কাশ্মীরি আপেল কুল। পুরো বাগান জুড়েই লাল-সবুজের সমারোহ। দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। মোটা অঙ্কের লাভের আশায় সোহাগের মুখে দেখা দিয়েছে হাসি। বিদেশি ফল দেশের মাটিতে।
বাগান মালিক উপজেলার লোকনাথপুরের মিজানুর রহমানের ছেলে ফরহাদ হোসেন সোহাগ জানান, ‘ছয় মাস আগে ভারত থেকে চারা আনা হয়। আনা-নেয়াসহ প্রতি পিস চারা খরচ পড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে মোট সাড়ে ৭ শ’ চারা লাগানো হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো।
প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে। এ বছর গাছপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ কেজি করে কুল হতে পারে। দ্বিতীয় বছর থেকে কুলের পরিমাণ দ্বিগুন হতে পারে বলে ধারণা করছি। এভাবে একটানা ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যাবে। ঢাকাতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমি এখনো বিক্রি শুরু করিনি। দিন দশেক পর থেকে শুরু করবো। সব মিলিয়ে এ বছর আমি ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’
অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালোলাগা ছিল। তাই লেখাপড়া শেষ করে অন্যান্য বেকার যুবকদের মতো চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নেমে পড়ি কৃষি কাজে। জমি লিজ নিয়ে শুরু করি ফলসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ। কিন্ত ভাগ্য যেন কোনো ভাবেই সহায় হচ্ছিলো না। বছর চারেক আগে লোকনাথপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশেই সড়কের দু’ধারে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে গড়ে তুলি পেয়ারার বাগান। পেয়ারা চাষেও আমি লাভের মুখ দেখতে পারিনি। এরপর ৩ বিঘা জমিতে লাউয়ের আবাদ করি। তাতেও হয়ে যায় মোটা অঙ্কের লোকসান। এক কথায় যে আবাদই করি পড়েছি লোকসানের মুখে।
কিন্ত আমি হাল ছাড়িনি। বর্তমানে কৃষি অফিসের পরামর্শে আপেল কুলের চারা লাগানোর পর ওই জমিতেই ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। আড়াই লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে। এখন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে কুল বাগান দেখতে, যা আমাকে আরো অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে তুলেছে।’
তিনি বেকার যুবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ১৩০ থেকে ১৪০টি চারা রোপণ করা যায়। ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এক বিঘা জমিতে কুল বাগান করে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। কুল চাষেই ঘুরে যেতে পারে বেকার যুবকদের ভাগ্যের চাকা।’
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ শামিউর রহমান জানান, রৌদ্রুজ্জ¦ল, উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমিতে কুল বাগান ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের কিরণ লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে। ৫ থেকে ৬ হাত দূরত্বে গাছের চারা রোপণ করতে হয়। তুলানামূলক রোগ-বালাইও কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসা হচ্ছে।
নতুনভাবে কেউ যদি কাশ্মীরি আপেল কুলের বাগান করেন এবং পরামর্শ চান তাহলে তাকে অবশ্যই সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।