চুয়াডাঙ্গা: চায়না কমলা লেবু সুমিষ্ট হলুদ বর্ণের রসালো একটি ফল। এই ফলের চাহিদা বাংলাদেশে ব্যাপক। তাই চাহিদা পুরনের জন্য বিভিন্ন মৌসুমে বাইরের দেশ থেকে ফল আমদানী করতে হয়। এদেশের মাটি উর্বর এবং আবহাওয়া ভালো হওয়ার কারনে সারা বছরই ফল চাষ সম্ভব বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। তাই স্থায়ীভাবে চাহিদা পূরনের জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞান ভিত্তিক ফলের চাষ শুরু করা।
তেমনি দেশের মাটিতে চায়না জাতের কমলা লেবুর চাষ করে অভাবনীয় এক সাফল্য পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নিধিকুন্ড গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক খান। আর সেই ফল উপরহার দিতে চান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
কৃষক ওমর ফারুক জানায় বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাটি এদেশের মাটিতে শুধু চায়না কমলার চাষ নয় সব রকম ফলের চাষ সম্ভব। আমি নিজে আজ গর্বিত এই ফলের চাষ করতে পেরে। আমি দরিদ্র একজন কৃষক হয়ে আমার বাগানের উৎপাদিত চায়না কমলা লেবু আমাদের দেশের উন্নয়নের সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিতে চাই। তিনি বলেন সারা দেশে এফলের চাষ করা হলে বাইরের দেশ থেকে আর ফল আমদানী করা লাগবে না।
চায়না কমলা লেবুর চাষ সম্পর্কে কৃষক ওমর ফারক খান জানান ২০১৬ সালে মাত্র ১ বিঘা জমিতে ১০০ টি চায়না কমলা লেবুর চারা পরীক্ষামুলকভাবে রোপন করা হয়। এক বছরের মাথায় প্রতিটা গাছে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করে। প্রথম বছরেই তিনি ভালো ফলাফল পান। ফল খেয়ে উপলদ্ধি করেন বাজারের চায়না কমলা লেবুর চেয়েও তার চাষকৃত ফলের মিষ্টতা আরো বেশী। এবং ফলের রং পাকা হলুদের মত হওয়ায় বাজারের কমলার সাথে পার্থক্য করা সম্ভব নয়। এরপর থেকে দরিদ্র কৃষক ওমর ফারুকের আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার বাগান থেকে পাইকারী ১০০ টাকা কেজি দরে ফল বিক্রি করে প্রথম বছরেই চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় করেন। পরিকল্পনা করে এমন জাতের কমলার চারা তৈরীর জন্য। এবং খাঁন নার্সারী নামে একটি স্থায়ী নার্সারীর ব্যবসা শুরু করেন। এখানে তিনি কাটিং পদ্ধতিতে কলম করে প্রায় ৫০ হাজার চায়না কমলা লেবুর চারা তৈরী করেছেন। যার বর্তমান বাজার মুল্য ৫০ লক্ষ টাকা। তার চায়না কমলা লেবুর বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে শত শত মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। বাগান পরিদর্শন করে লেবু খেয়ে পরখ করে চারা নিয়ে বাগান তৈরীর পরিকল্পনা করছে অনেকেই।
বর্তমানে নতুন করে ৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চায়না কমলার বাগান আরো সম্প্রসারিত করেছেন। পাশাপাশি ২ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা,দুই বিঘা কাশ্মীরী আপেল কুল, ১ বিঘা জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ সহ আরো এক বিঘা জমিতে থাই কাটিমন জাতের (বারোমাসি) আমের চাষ ও এক বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন।
ওমর ফারুক জানায় তার একবিঘা জমিতে তিন বছরে চায়না কমলা লেবু চাষে তার খরচ হয় দেড় লক্ষ টাকা আর তিন বছরে আয় হয়েছে প্রায় চব্বিশ লক্ষ টাকার মত। এছাড়া বিশ হাজার চারা বিক্রি করে ৪০ লক্ষ টাকা আয় করেন। বর্তমানে তার নার্সারীতে আরো ৫০ লক্ষ টাকার চারা বিক্রির জন্য মজুত আছে। ওমর ফারুকের বাগান ও নার্সারীতে প্রায় ত্রিশ জনের মত লোক কাজ করে তাদের জিবীকা নির্বাহ করছেন।
চায়না কমলা লেবু চাষের সম্ভবনা সম্পর্কে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান চুয়াডাঙ্গার মাটির উর্বরতা ভালো ও আবহাওয়ার অনূকুল পরিবেশ হওয়ায় দুই বছর ধরে কৃষক ওমর ফারুক কমলার চাষ করে ভালো ফলাফল পেয়েছে। আমরা এই চাষ দেশের সবর্ত্র হবে কিনা তা পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে চায়না কমলা লেবু চাষে আমারা চাষীদেরকে উৎসাহিত করছি। যদি সারা দেশে চাষ সম্ভব হয় তাহলে এ থেকে সম্ভবনাময় কিছু আশা করা যেতে পারে। আমরা এ চাষটিকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য চাষীদের সুপরামর্শ দিয়ে আসছি।