বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫, ১০:২৯:২২

এবার গরুর ‘আবাসিক হোটেল’, আছে যেসব সুযোগ-সুবিধা!

এবার গরুর ‘আবাসিক হোটেল’, আছে যেসব সুযোগ-সুবিধা!

জিসান আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা : মানুষের থাকা-খাওয়ার জন্য নয়, গরুর থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে আবাসিক হোটেল। যেখানে একদিন গরু থাকলে ভাড়া গুনতে হবে ৫০০ টাকা। রয়েছে গোসল ও দিনে চার বেলা খাওয়ার সুব্যবস্থা। শুধু থাকা খাওয়ায় নয়, গরু ঘোরাফেরার জন্যও রয়েছে মনোরম পরিবেশ।

চুয়াডাঙ্গার এক গরু ব্যাপারি দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি বাজারে গড়ে তুলেছেন এমন অভিনব হোটেল। যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম বড় গরুর হাট ডুগডুগি গরুর হাটের পাশেই একটি আমবাগানের ভেতর আরিফুল ইসলাম নামের ওই গরু ব্যবসায়ী ‘আরিফ গবাদি প্রাণীর হোটেল কাম ওয়্যারহাউস’ এটি গড়ে তুলেছেন। হাট থেকে যারা গরু কেনেন তারা কেনা গরু এই হোটেলে রেখে অন্য হাটে যান গরু কিনতে।

হোটেলে গরু রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন গরু ক্রেতারা। গরু দেখাশোনার জন্য হোটেলের কর্মীরা আছেন। কর্মীরা গরুকে গোসল করান। নিয়মিত তিন-চার বেলা খাবার দেন।

প্রয়োজন হলে বাইরের খোলা মনোরম পরিবেশে গরু ঘুরিয়ে আনেন হোটেল মালিক।

হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি গরু কেনাবেচার কাজ করে থাকেন। ঢাকা কিংবা দূরের কোনো জেলা থেকে গরুর ব্যাপারীরা এলে তিনি তাদেরকেও গরু কেনাবেচায় সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি উপলদ্ধি করেছেন, একটি গরু কেনার পর আরেকটি গরু কিনতে গিয়ে আগের কেনা গরুটি কোথায় রাখবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান ব্যাপারীরা। সেই সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি তৈরি করেন গরুর হোটেল।

আরিফুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে হোটেলটি তৈরি করা। আপাতত ১৭টি গরু রাখার ব্যবস্থা এখানে আছে। কেউ ছাগল রাখতে চাইলেও রাখতে পারবেন। গরু রাখার স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়, সঙ্গে আছে গরুর খাবার ব্যবস্থা। খামারে যেভাবে গরু রাখা হয় সেভাবে গরু রেখে খাওয়ানো হয়ে থাকে। শিগগিরই হোটেলটি সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হবে। হোটেলের পরিধি বাড়ানোর চিন্তাভাবনাও আছে।’

 মানুষের আবাসিক হোটেলের মতো চেক আউট এবং চেক ইন ব্যবস্থা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে সময়ে গরু হোটেলে ঢুকবে তার পরের দিন সেই সময়টি গরুর চেক আউট হিসেবে গণ্য হবে। এখানে খাওয়া দাওয়া বুফে সিস্টেম। প্রতিটি গরুর জন্য একটি বড় স্থায়ী খাবার পাত্র দেওয়া আছে। সেখানে সবসময়ই ঘাস বিচালি ইত্যাদি দেওয়া থাকবে। গরুর যখন মন বলবে খাবে। কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু কোরবানি ঈদ উপলক্ষে নয়। সব সময় এই হোটেল চালু থাকবে। পাশেই জেলার অন্যতম বড় পশুর হাট রয়েছে। ডুগডুগি পশু হাট। অনেক ব্যাপারে এবার এই হাট থেকে গরু কিনে আমার হোটেলে রেখেছেন। পরে অন্য হাট থেকে আরো গরু কিনে একসাথে ট্রাকে তুলে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। হাটের কাছাকাছি হওয়ায় সবাই আমাদের হোটেলের সুবিধা নিতে পারছেন।’

এলাকাবাসী জানায়, এখানকার পরিবেশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো। কাছেই প্রধান সড়ক। এখান থেকে গরু দেশের যেকোনো প্রান্তে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। প্রয়োজনে নতুন ঘর তৈরি করা যাবে, জায়গা আছে। একটি গরুপ্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আরিফুল ইসলাম একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্যোগের ফলে উপকৃত হচ্ছেন গরু ব্যবসায়ীরা। গরু কেনার পর এখানে রাখা যাচ্ছে কিংবা হাটে তোলার আগে গরুকে এখানে বিশ্রামে রাখা যাচ্ছে।

কোনো গরুর ব্যাপারি হাট থেকে ১০টি গরু কিনে ঢাকায় কিংবা অন্য কোনো জেলায় নিয়ে যাবেন। তিনি ধীরে সুস্থ্যে একটি দুটি করে গরু কিনে এই হোটেলে রেখে বাকি গরু কেনায় মনোযোগ দিতে পারবেন। ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগ আরো প্রসারতা লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।’-কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে