রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ০৫:১৯:১৭

অবৈধ রোহিঙ্গাদের টার্গেট বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিয়ে

অবৈধ রোহিঙ্গাদের টার্গেট বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিয়ে

সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া থেকে : উখিয়া উপজেলায় আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মিয়ানমারের অবৈধ অধিবাসী রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি যুবক-যুবতীদের বিয়ে। অসম এ বিয়ে থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। একশ্রেণির অসাধু জনপ্রতিনিধি ও কাজীদের সহযোগিতায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্নে অবৈধ রোহিঙ্গা যুবক-যুবতীদের সঙ্গে স্থানীয়দের বিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৮ থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা এ দেশে প্রবেশ করতে থাকে। সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর মর্যাদা নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ নয়াপাড়া, মুছুনি, কুতুপালং, খুনিয়াপালং, হলদিয়াপালং, জুম্মাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে দুদেশের কূটনীতিক প্রচেষ্টায় কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরে গেলেও এখনও প্রায় ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ নয়াপাড়া, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

এছাড়াও প্রায় ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফ, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বনায়ন ধ্বংসপূর্বক জবরদখল করে বসবাস করে আসছে। এসব রোহিঙ্গার অনেকে ইউএনএইচসিআর ও আরএমও’র মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি  জমিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়াও বাংলাদেশি পরিচয়ে ভুয়া আইডি কার্ড নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় এবং সরকারি বনভূমি দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের ২০১৪ সালে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা-বাঙালি বিয়ে নিষিদ্ধ করে উপজেলা প্রশাসনকে  সতর্ক করে এবং রোহিঙ্গা-বাঙালি বিয়ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিধান করা হলেও সেই আইনকে কোনো তোয়াক্কা না করে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি মেয়েদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিয়ে।

জানা যায়, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে অবস্থানরত আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া রোহিঙ্গারা বিশেষ করে উখিয়ার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিয়ে করার মিশনে নেমেছে। বিদেশ থেকে আসা রোহিঙ্গারা উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের পাশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অজ্ঞতার সুযোগে টাকার প্রলোভন এবং পরিবারের সদস্যদের বিদেশ নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের বিয়ে করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

তারা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে শিক্ষিত মেয়েদের বিয়ে করার জন্য টার্গেট করে অভিভাবকদের দ্বারা ওই সব সচেতন শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গারা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় নকল আইডি কার্ড ও জন্ম সনদপত্র তৈরি করে বিয়ে নিবন্ধনও সম্পন্ন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশি অভিভাবকরা বিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে না পারলে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্কুল কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। উ

খিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা গ্রামের শাহীনা আক্তারকে বিয়ে করা প্রবাসী রোহিঙ্গা মুজিব জানান, প্রবাস থেকে এসে শাহীনাকে বিয়ে করে বর্তমানে শ্বশুরের জমিতে স্থায়ীভাবে বসাবাস করছেন এবং তিনি মিয়ানমার থেকে তার পুরো পরিবারকে নিয়ে এসেছেন। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করা এনজিও হেলপ কক্সবাজার-এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাসেম বলেন, বাংলাদেশের আইনকে তোয়াক্কা না করে মিয়ানমার থেকে বিদেশ যাওয়া রোহিঙ্গারা উখিয়ার বিশেষ করে কুতুপালং এলাকার অভিভাবকদের প্রলোভনে ফেলে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের অমতে বিয়ে করে বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার পাঁয়তারাকারী রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অভিভাবকদের চিহ্নিত করে কঠোর হাতে দমনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় স্কুল কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা রোহিঙ্গাদের কবলে পড়ে অকালে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে পারে।

উখিয়ার কাজী অফিসের বিয়ে নিবন্ধনকারী মো. হারুন জানান, অনেক মিয়ানমার প্রবাসী রোহিঙ্গা বাংলাদেশি স্কুল কলেজের ছাত্রীদের সঙ্গে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন নিয়ে বিয়ে নিবন্ধন করতে এলেও উখিয়া কাজী অফিসে বিয়ে নিবন্ধন করেন না। প্রশাসনকেও এসব বিয়ের ব্যাপারে অবহিত করেন না।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাঈন উদ্দীন জানান, উপজেলা প্রশাসন রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি নিষিদ্ধ বিয়ে বন্ধে বদ্ধপরিকর। এসব বিয়ের ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানবজমিন

২০ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে