সরওয়ার আলম শাহীন : বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের যৌথ আক্রমণের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর এপার-ওপারে লুকিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সেদেশে মুসলিম রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় হলেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা যাতে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকা জুড়ে বিজিবি, সাগর পথে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামানো যাচ্ছে না।
একদিকে রোহিঙ্গারা দালালের সহায়তায় বাংলাদেশে ইন করলেও অন্যদিকে পুশব্যাক চলছে সমানতালে। বিজিবি অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে বলে দাবি করলেও বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা ঠিকই সীমান্তের অন্যান্য পয়েন্টগুলো দিয়ে সীমান্তে ওত পেতে থাকা দালালদের সহায়তায় বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী একটি সিন্ডিকেট নিয়োজিত দালালরা সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রোহিঙ্গাদের ব্যবসা করতে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেটটি বস্তি এলাকায় একপ্রকার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। রোহিঙ্গারা বস্তিতে আসার আগেরই নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট ছোট ঘর। এসব ঘর ভাড়া দেয়ার প্রতিযোগিতাও চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা শত শত রোহিঙ্গা পরিবার উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন রোড দিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করছে।
এক্ষেত্রে সীমান্তে নিয়োজিত দালালরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য সেট নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায়। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন এলাকার রাস্তার পাশ দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
সীমান্তরক্ষী বিজিবিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কিছু কিছু রোহিঙ্গা আটক হলেও বেশিরভাগ রোহিঙ্গা দালালদের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে নির্ধারিত গন্তব্যে। সূত্র জানায়, উখিয়া সীমান্তের রেজু আমতলী, ঘুমধুম, তুমব্রু,বালুখালী,পালংখালী, আনজুমান পাড়া পয়েন্ট দিয়ে গত এক সপ্তাহে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্থানীয় গ্রামবাসী বললেও ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার অত অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করেন।
তার মতে, সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে বিজিবি সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে, অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের আটক করে মানবিক সেবা দিয়ে প্রতিদিনই মিয়ানমারে পুশব্যাক করা হচ্ছে। বিজিবি অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে বলে দাবি করলেও সীমান্তে প্রত্যাবাসন বিরোধীদের নিয়োজিত দালাল চক্র সিন্ডিকেট সীমান্তের অন্য পয়েন্টগুলো ব্যবহার করে পুশব্যাক করা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসছে।
সীমান্তবর্তী উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিয়ানমার সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ শুনা যায় প্রতিনিয়ত। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়লেও তার ইউনিয়নে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ তেমন একটা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। তবে গাড়িতে করে রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যাওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের পাশাপাশি এখানকার বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ পল্লীতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মানবজমিন
৩ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি