বুধবার, ০৯ আগস্ট, ২০১৭, ০১:১৮:১২

কক্সবাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জামায়াত

কক্সবাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জামায়াত

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার থেকে : দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী এলাকা কক্সবাজারেও বইছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। এ জেলার চারটি সংসদীয় (২৯৪, ২৯৫, ২৯৬ ও ২৯৭) মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে থাকবে জামায়াত। যদিও দলগতভাবে অংশ নিতে পারবে না নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি।

নির্বাচন করতে হলে ‘স্বতন্ত্র’ বা ২০ দলীয় জোটের কোনো প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এদিকে বিএনপি-জামায়াত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় একটি আসনের নেতৃত্বে এখন জাতীয় পার্টি। ওই আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া জাপা। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা ততই বাড়ছে।

বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কক্সবাজারের ভোটাররা বলছেন, আগামী নির্বাচনে মাদকের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হবে। যেসব প্রার্থী ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক কারবারিতে জড়িত তাদের ‘না’ জবাব দেওয়া হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকেও এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সাগর পাড়ে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যান দলের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত এমপি আবদুর রহমান বদি। দুর্নীতির মামলায় জেলও খাটেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর ইয়াবা সংক্রান্ত বক্তব্যে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে পারেন আবদুর রহমান বদি।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) : এ আসনের বর্তমানে এমপি জাতীয় পার্টির নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আর ছাড় দিতে নারাজ।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর রয়েছেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এবং জেলা আওয়ামী লীগের মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম সজীব।

তবে বিএনপি থেকে এ আসনে শক্ত প্রার্থী রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ দলের একক প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। মামলা জটিলতায় ভারতের শিলংয়ে অবস্থান করলেও নেতা-কর্মীর সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নেতা-কর্মীদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন তার স্ত্রী সাবেক নির্বাচিত এমপি হাসিনা আহমদ। মামলা জটিলতায় সালাউদ্দিন আহমদ নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী হাসিনা আহমদ মনোনয়ন পাবেন বলে নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে আলোচনা।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) : এ  আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের পক্ষে মনোনয়ন চাইবেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন ইব্রাহিম ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ ওসমান গনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ এবং মহেশখালীর সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক। তবে আগামী নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আজাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি এলাকায় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর রাখছেন। অন্যদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহও মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) : এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে বসে নেই জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক। শক্ত প্রার্থী হিসেবে তিনিও সমানতালে প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন।

অপরদিকে এ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি লুত্ফুর রহমান কাজল একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে আস্থাভাজন হিসেবেই পরিচিত তিনি। তবে ২০ দলীয় জোটের শক্ত প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বর্তমান কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ। তিনি নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণে মাঠে তৎপর রয়েছেন।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) : এ আসনের বর্তমান এমপি বহুল ‘আলোচিত’ ও ‘বিতর্কিত’ আবদুর রহমান বদি। নানা বিতর্কের মধ্যেও তিনি দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এমপি থাকাকালীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ইয়াবা কারবারিদের দুটি তালিকায়ও তার নাম রয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ইয়াবা কারবারি তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছেন এমপি বদিসহ তার পরিবারের ১৫ সদস্যের নাম। এ কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন তার না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। প্রার্থী বদল হলে এ আসনে দলের হাইকমান্ডের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন কাতারের আমিরের সাবেক উপদেষ্টা ড. হাবিবুর রহমানের নাম। এলাকার নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তিনি আলোচিত।

তবে দলীয় সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও শিল্পপতি মোহাম্মদ ইয়াহিয়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর নাম। তবে টেকনাফের মোহাম্মদ আবদুল্লাহও মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন উখিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী। ২০ দলীয় জোটের কাছ থেকে এ আসনটি বাগিয়ে নিতে অনেকটা নীরবেই তিনি নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। -বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে