রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৮:১৬

রোহিঙ্গাদের নিয়ে দালালদের রমরমা বাণিজ্য

রোহিঙ্গাদের নিয়ে দালালদের রমরমা বাণিজ্য

আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ থেকে : প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে দালালদের রমরমা বাণিজ্য চলছে। টেকনাফের সমুদ্র উপকূলীয় অধিকাংশ জেলে নৌকার মালিক ও মাঝি এখন রোহিঙ্গা পাচারের দালাল হিসেবে কাজ করছে। তাদের সংখ্যা কয়েক হাজার।

টেকনাফের শামলাপুর থেকে শাহ্‌পরীরদ্বীপ পর্যন্ত ২০/২৫ টি নৌঘাটে ২ হাজারের বেশি ফিশিং বোট রয়েছে। এসব ফিশিং বোট এখন মৎস্য শিকারের পরিবর্তে মিয়ানমার উপকূল থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই করে আনতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

২০ থেকে ৩০ জন ধারণ ক্ষমতার ছোট ছোট এই ফিশিং ট্রলারগুলো রাতের অন্ধকারে মিয়ানমার উপকূলে ভিড়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এপারে চলে আসে। আবার এইসব দালালের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এক সময় মালয়েশিয়া মানবপাচারে জড়িত গডফাদারদের। আর এই গডফাদারদের রয়েছে মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের দালালদের যোগসূত্র।

প্রবাসে থাকা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের লোকজন গডফাদারদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের লোকদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। আর এতে মুখ্যভূমিকা পালন করছে সমুদ্র উপকূলের মাঝি ও জেলেরা। যারা এখন দালালে পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে ৪২ জন দালালকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দালালরা জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করছে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে  টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। যারা টাকা দিতে পারছে না অথবা টাকার পরিমাণ কম তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে স্বর্ণলঙ্কার, টাকা, কাপড়-চোপড়সহ যাবতীয় মূল্যবান যা কিছু।

আবার পরিবারের দুই-একজন সদস্যকে বন্দি রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে দালালদের চাহিদামতো টাকা সংগ্রহ করে আনতে। শুধু তাই নই, দালালদের চাহিদামতো টাকা পরিশোধ করতে না পারায় রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার ডুবিয়ে দেয়ার মতো নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে যাচ্ছে এই দালালরা। জানা গেছে, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই দালাল সিন্ডিকেট তাদের এই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

রাখাইন রাজ্যের উদং থেকে আসা মোক্তার আহমদের ছেলে এজাহার হোসেন মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে জানান, মিয়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংদিয়া হতে এপারের শাহ্‌পরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত জনপ্রতি ৮ হাজার টাকায় দরদাম করে এলেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করে।

টাকা পরিশোধ করতে না পারায় শাহ্‌পরীরদ্বীপ উত্তরপাড়ার কালা নামের এক দালাল তার পরিবারের মা ও ভাইসহ ২ জনকে আটকে রাখে। তারা ওই নৌকায় ২৫ জন পাড়ি দিয়েছিল বলেও জানান তিনি। বর্তমানে তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে জানা যায়নি।

একইভাবে রাখাইনের মেরুল্লা এলাকা থেকে আসা মো. জাকারিয়া জানান, তার ভাষায় বোটওয়ালা দালাল তার স্ত্রীর কাছ থেকে দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও কাপড়-চোপড় কেড়ে নিয়েছে ও পরিবারের ৩ সদস্যকে আটকে রেখেছে। সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লানপাড়া এলাকার মাঝিরূপী ওই দালালের নাম না জানলেও তার একটি মোবাইল নম্বর সংগ্রহে রয়েছে।

এই নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও ওই দালাল দাবি করেন, পুলিশ-বিজিবি’র সামনে ট্রলার করে মঙ্গলবার ভোরে লম্বরী ঘাটে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসে। পুলিশ-বিজিবি’র দায়িত্বরত ওই সদস্যরা বলে ট্রলার ভাড়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের যেতে দাও। এভাবেই সীমান্ত জুড়ে দালাল চক্রের রমরমা বাণিজ্য চলছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাইন উদ্দিন খান জানান, রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে যারা অপরাধ করছে সে সব দালালকে ধরতে পুলিশ কাজ করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৪২ দালালকে সাজা দেয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি আরো জানান, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যারা ব্যবসা করবে তাদেরকে কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, দালালের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে  বোট মালিক এবং জেলেদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে