জি এ এম আশেক উল্লাহ কক্সবাজার : অং সান সুচির ভাষণকে প্রত্যাখ্যান করেছেন উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেয়া শিক্ষিত ও সচেতন রোহিঙ্গারা। তারা বলেছেন, সুচির ভাষণ ‘গলদ’ (সঠিক নয়)। তাই এটি তারা মানেন না। মঙ্গলবার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া শিক্ষিত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে সু চির ভাষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা এই ভাষণকে গলদ তথা মিথ্যায় ভরপুর বলে উল্লেখ করেছেন।
কুতুপালয়েং আশ্রয় নেয়া মোহাম্মদ আচেম (৪১) মিয়ানমার রেডিও থেকে প্রচারিত সুচির ভাষণ সম্পর্কে জেনেছেন। আচেম চিটওয়ে (আকিয়াব) বিশ্ববিদ্যায়ল থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
আচেম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার আগে বুচিদং এর টংবাজার ইয়াম্মা ৭ নং এলাকায় বসবাস করতেন। তার বাবা মোহাম্মদ তোহা রাখাইনে টংবাজার হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ১৪ সেপটেম্বর তিনি স্বপরিবারে আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
সু চির ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘রাখাইনের গনহত্যা ও ধংসযজ্ঞে লিপ্ত সেনাবাহিনী সু চিকে গলদ রিপোর্ট দিয়েছেন এবং সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সু চি ভাষণ দিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তিনি সু চির ভাষণের পর বুচিদং এর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, সেনা সদস্য ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা যেসব বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল এখন সেই পোড়া ক্ষত চিহ্ন সরিয়ে ফেলছে যেন কোন প্রমাণ না থাকে। বুচিদংয়ের কিনোক থি থেকে পালিয়ে আসা মৃত আমল হোসাইনের পুত্র শফি উল্লাহ (৫৬) টংবাজার হাই স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি স্ত্রী পুত্রসহ পরিবারের আট সদস্য নিয়ে ১৩ দিন হাঁটার পর বাংলাদেশে সীমান্তে আসেন। বর্তমানে তিনি বালুখালীর একটি পাহাড়ি ঢালুতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনিও ‘বার্মা রেডিও’ মাধ্যমে সুচির ভাষণ সম্পর্কে জেনেছেন। তিনি বলেন, সু চির ভাষণ রাখাইনের সেনাবাহিনী কর্তৃক শেখানো বাক্য। এটা কেউ মানবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা পালিয়ে এসেছি আমাদের দেখতে প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। অথচ আরাকানে উগ্র বৌদ্ধরা এবং সেনাবাহিনীর লোকজন দিনের পর দিন রোহিঙ্গা মসুলমানদের জুলুম করে যাচ্ছে, যদি সু চি আন্তরিক হতেন তাহলে তিনি ক্ষমতায় আসার পর একটি বারের জন্য হলেও আরাকানের পরিস্থিতি দেখতে আসতেন। তার আন্তরিকতা থাকলে তিনি ভাষণ দেয়ার আগে রাখাইন ঘুরে বাস্তব পরিস্থিতি দেখে ভাষণ দিতেন। আমরা ফিরে যেতে চাই। আমরা শান্তি চাই। সেই পরিবেশ যেন তিনি করতে বাধ্য হন সে জন্য বিশ্বসম্প্রদায়কে কাজ করতে তিনি অনুরোধ জানান।
বুচিদংয়ের মনোপাড়ার মোহাম্মদ সোহাইল বর্তমানে কুতুপালংয়ে রয়েছেন। তিনি জানান,এখনও বামার রেডিও থেকে প্রতি ঘন্টায় ঘোষণা দিচ্ছে ‘টোয়ে’ ‘টোয়ে’ (পালিয়ে যাও পালিয়ে যাও)। সু চির ভাষণ যদি সত্যি হতো তাহলে রেডিও থেকে এ দিনও কেন এই ঘোষণা এলো? তিনি আরো বলেন,আমারা বার্মার নাগরিক। আমাদের কাছে তার তথ্য প্রমাণ রয়েছে। আমরা বার্মায় ফিরে যেতে চাই। সু চি যেন সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেন। আমাদের আর কোনো দাবি নেই।-নয়াদিগন্ত
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস