আবু সালেহ আকন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ফিরে : গুলি কিংবা নির্যাতনে আহত রোহিঙ্গাদের হাতে-পায়ে মাইন ও বোমা বেঁধে দেয় বর্মি সেনাবাহিনী। কেউ তাকে উদ্ধার করতে গেলে ওই মাইন ও বোমা বিস্ফোরণে যাতে উদ্ধারকারীরও মৃত্যু হয় সে জন্যই তারা এ কাজটি করে। যে কারণে বর্মি সেনা ও নাডালা বাহিনীর হাতে আহত অনেক স্বজনকে ওভাবেই ফেলে রেখে আসতে হয়েছে রোহিঙ্গাদের। ফেলে আসা ওই স্বজনেরা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন সে খবরও পাননি কেউ। এভাবে স্বজনকে ফেলে এসে কেবল কষ্টই পাচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। একাধিক রোহিঙ্গা বলেছেন, বর্মি বাহিনীর এটি ছিল একটি ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে অনেকে নিহত হয়েছেন।
বর্মি বাহিনী যে শুধু সীমান্ত এলাকায় মাইন পুঁতেছে তাই নয়, আহত রোহিঙ্গাদের শরীরে মাইন বেঁধে দেয়ারও অভিযোগ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে। মংডুর পালিংগাজিরির বাসিন্দা সৈয়দ আহম্মদ বলেন, বর্মি বাহিনী হামলা চালিয়েছে তিন দিক থেকে। আকাশপথে হেলিকপ্টার দিয়ে, আর নিচে বর্মি বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের নিয়ে গঠন করা নাডালা বাহিনী। বর্মি বাহিনী হামলা চালায় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে, আর নাডালা বাহিনীর সদস্যরা ধারালো অস্ত্র¿ নিয়ে হামলা করে। মগ নারীরাও এসব হামলায় অংশ নিয়েছে। তারা বিভিন্ন মুসলিম পাড়ায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে পাহারা দেয়।
সৈয়দ হোসেন বলেন, কোনো এলাকায় হামলার সময় বর্মি বাহিনী গুলি করতে করতে মুসলিম পাড়ায় প্রবেশ করে। এ সময় ঘরবাড়ি ছেড়ে রোহিঙ্গারা রাস্তায় বের হলে প্রথমে নাডালা বাহিনীর সদস্যরা যাকে হাতের নাগালে পায় তার গলা কাটে। পরে বর্মি সেনারা তাদের গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, বর্মি বাহিনী যেসব এলাকায় কমসংখ্যক রোহিঙ্গাকে হাতের নাগালে পেয়েছে সেসব এলাকায় তারা ‘মানব ফাঁদ’ পাতে। যেসব রোহিঙ্গা তাদের হাতে আহত হয় তাদের শরীরে মাইন এবং বোমা বেঁধে দেয়।
সৈয়দ হোসেন বলেন, এভাবে শরীরে মাইন বাঁধা অনেক রোহিঙ্গাকে তারা কাতরাতে দেখেছেন। মাইন ও বোমা বেঁধে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে বর্মি সেনা ও নাডালা বাহিনীর সদস্যরা। আহতদের উদ্ধারে যারা গিয়েছে তারাই মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। এ বিষয়টি জানাজানি হলে আর কেউ আহত স্বজনকে উদ্ধারে যাননি। শরীরে মাইন এবং বোমা বাঁধা নেই বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারলেই কেবল তারা আহতদের উদ্ধার করেছেন।
নুর কামাল নামের মংডুর আরেক বাসিন্দা বলেছেন, তিনি চোখের সামনে তার আপন ভাই নুর হোসেনকে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় দূরে ঝোপের মধ্যে বসে থেকে তিনি দেখতে পান নুর হোসেনের শরীরে কি যেন বেঁধে দিচ্ছে বর্মি সেনারা। এ সময় তার ভাই চিৎকার করে বলতে থাকেন তার কাছে যেন কেউ না যায়। এর কয়েক মিনিট পরই বিস্ফোরণে নুর হোসেনের পুরো শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। নুর কামাল বলেন, এভাবে আহতদের দিয়ে ফাঁদ পাতে বর্মি বাহিনী। যে কারণে আহত অনেক রোহিঙ্গাকে বাঁচানো সম্ভব হলেও ভয়ে কেউ ধারে কাছে যাননি।
মংডুর পালিংগাজিরির বাসিন্দা আফসার বলেছেন, সীমান্তে বর্মি সেনাদের মাইন পেঁতে রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে সীমান্ত পার হয়ে এপারে আশ্রয় নিতে আসা মানুষ যাতে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হন।
বুচিডংয়ের টংবাজার গোলঙ্গিহাড়ি এলাকার আবদুর রশিদ বলেন, গুলি করতে করতে বর্মি বাহিনী পাড়ায় প্রবেশ করে। আর নাডালা বাহিনীর সদস্যরা যাকে যে অবস্থায় পায় গলা কেটে ফেলে। পরে আহতদের শরীরে তারা মাইন বেঁধে দেয়। তিনি বলেন, নিজের চোখে এ দৃশ্য দেখে প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে আহতরা কাতরানোর সময় দেখি দু-একটি বিস্ফোরণ ঘটছে। তখনই বিষয়টি বুঝতে পারি। পরে আহতদের উদ্ধার না করেই তারা চলে আসি।-নয়াদিগন্ত
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস