বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:১৫:২১

খোলা আকাশের নিচে এক রোহিঙ্গা শিশুর ঘুম

খোলা আকাশের নিচে এক রোহিঙ্গা শিশুর ঘুম

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের তমব্রু এলাকায় এখনো জ্বলছে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাখাইনরা বাছাই করে বাড়িঘরগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এপারে বান্দরবানের তমব্রু গ্রাম থেকে আগুনের শিখা স্পষ্ট দেখা যায়। তবে রাখাইনরা আগের মতো অনেক বাড়ি একসাথে পোড়াচ্ছে না। এরা বিকেলের দিকটা বেছে নিচ্ছে পোড়ানোর জন্য। সাংবাদিকেরা রিপোর্ট পাঠানোর জন্য বিকেলের দিকে সীমান্ত এলাকা ছেড়ে চলে যান এটা ওরা জেনে গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং সেনাবাহিনী তাদের সীমান্তে টহল জোরদার করেছে। ফলে আগের মতো একসাথে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না বলে আশ্রয়শিবিরে আসা তাদের আত্মীয়স্বজনেরা জানিয়েছেন। রোহিঙ্গারা এখন ছোট ছোট দলে বা একটি অথবা দু’টি পরিবার একসাথে করে আসছে। জামাল তার পরিবারের লোকজন নিয়ে গত সোমবার বালুখালী এলাকায় রাস্তার পাশে বসেছিলেন। তিনি জানালেন, অনেক সাবধানে আমাদের আসতে হয়েছে। কারণ মগেরা (মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অথবা রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন) আমাদের দেখলেই গুলি করে। গুলবানু বেগম বালুখালী মাদরাসার পাশে একটি ভবনের নিচে বসেছিলেন তার ছোট ছোট পাঁচ সন্তান নিয়ে। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে মগেরা গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে এসেছি আরেকটি পরিবারের সাথে।

বান্দরবান জেলার তমব্রু গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, আগে বার্মিজরা সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিত। এখন এরা বিকেলের দিকে জ্বালিয়ে থাকে। সারারাত জ্বলে পরের দিন সকাল বেলা ছাই হয়ে যায়। তিনি বলেন, শুধু রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়েই এরা ক্ষান্ত হচ্ছে না, ওখানকার মুসলমানদের ঐতিহ্যকেও শেষ করে দিচ্ছে।

কামাল হোসেন বলেন, মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের লোকজন ব্রিটিশদের অধীনে থাকার সময় তমব্রু একটা গ্রাম ছিল। ব্রিটিশরা দেশভাগের সময় তমব্রু গ্রামকে দুই ভাগ করে দিয়ে যায়। আমাদের পূর্বপুরুষদের কেউ ওপারে থেকে যান এবং আমরা চলে আসি এপারে। ওপারে একটা বিশাল বড় কবরস্থান রয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। আজকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের তাড়িয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা পুরনো সেই কবরস্থানের ওপর ব্যারাক তৈরি করে আমাদের মনে আঘাত করেছে।

তিনি বলেন, ওপারে অনেক পুরনো মসজিদ রয়েছে, সেগুলো ওরা ভেঙে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আমরা এখান থেকে দেখি কিন্তু কিছু করতে পারি না। এরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কবরে নাচানাচি করছে, অত্যাচার করছে। আমাদের ঐতিহ্যকে সম্মান করছে না।

তমব্রুর বাসিন্দা উখিয়ার কলেজছাত্র জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদের পরদিন আমাদের গ্রামে মিয়ানমার সেনাদের গুলি এসে লেগেছে। ওরা বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ওখানকার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিলে সেখান থেকে জ্বলন্ত ছাইও এসে এখানে পড়ছে। আমরা আতঙ্কে আছি কবে যেন সে আগুনে আমাদের বাড়িঘরও জ্বলে যায়।

তমব্রুর নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন। পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরের ছাই এসে তাদের গায়ে পড়ে। নীরবে আহাজারি করা ছাড়া তাদের করার কিছুই থাকে না।

জসিম উদ্দিন জানান, নো ম্যানস ল্যান্ডে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে এখনো মানুষ জখম হচ্ছে। তমব্রুর নো ম্যানস ল্যান্ডে এক হাজার ৪০০ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। চার-পাঁচজন রোহিঙ্গা মাইন বিস্ফোরণে হাত-পা হারিয়েছেন। এদের সবাই বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ১৫ দিন আগে এসেছেন হাফেজ রহিম আলী। তিনি বলেন, জান বাঁচাতে চলে এসেছি। কিন্তু পরে শুনেছি আমি যে মাদরাসার শিক্ষক ছিলাম সেটি পুড়িয়ে দিয়েছে মগরা। মাদরাসায় থাকা কুরআন এবং হাদিসের বইগুলো মগেরা পুড়িয়ে দিয়েছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে