নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন, যাদের অর্ধেকের বেশিই এসেছেন মাস খানেকের মধ্যে। রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু এবং বৃদ্ধরা বিভিন্ন সেবাদানকারীদের কাছে আসেন, কেউ হারিয়ে থাকলে তাদের ব্যাপারে জানান, প্রয়োজনীয় তথ্য দেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২ জন শিশু হারিয়ে যাচ্ছে। নিখোঁজদের ব্যাপারে শরণার্থীদের মাঝে প্রচারণা চালানো এবং সন্ধান পেলে পরিবারে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অসাধারণ কাজ করছে ‘নিখোঁজ এবং সন্ধান বুথ’।
নুর নাহার ৫ বছর বয়সী মেয়ে রুজিনাকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি হারানো মেয়েকে খুঁজে দিতে বলছিলেন, বসে বসে বুক চাপড়িয়ে উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন। তিনি দু’ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘সোমবার সকাল ১১টায় আমি আমার মেয়েকে কুতুপালং এ অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ কিনতে ছিলাম মেয়েটিকে সাথে নিয়ে। কিন্তু ওষুধ কেনার সময় তাকে হারিয়ে ফেলি। আগেও আমি অনেক জায়গায় তার খোঁজে ঘুরেছি কিন্তু সন্ধান পাইনি।’
নুরের স্বামী জাহিদ হোসাইনকে সেনারা মেরে ফেলেছে মিয়ানমারের রাজিডং জেলার শিলহাটিতে।তিনি তার দু’ সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তার ছোট ছেলে রুমেশের বয়স তিন বছর। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘২৫ আগস্ট আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি এবং এখন আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। আমি আমার স্বামীকে হত্যার জন্য সেনাদের দায়ী করি কিন্তু আমার মেয়েকে হারানোর পেছনে কাকে দায়ী করবো? মেয়ে হারিয়ে মায়ের আর্তনাদে আমি মানসিক কষ্ট পাই, এই কষ্ট আমাকে সবসময় পীড়িত করে।
নাজির আহমেদ কুতুপালংয়ের নিখোঁজদের তথ্য কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।৫ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ৩৩২ জন শিশুর ব্যাপারে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং ১৮০ জনকে তাদের পরিবারে ফিরে যেতে সাহায্য করেছেন। নাজির আল জাজিরাকে বলেন, আমি প্রতিদিন হারিয়ে যাওয়া বা বিচ্ছিন্ন হওয়াদের পুনর্মিলন ঘটাতে ২৫ থেকে ৩০ বার ঘোষণা দিয়ে থাকি।
শামসুল আলম হচ্ছে এমন একজন ভাগ্যবান পিতা যিনি তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের খুঁজে পেয়েছেন। সেই দুই ছেলে হচ্ছেন- ৮ বছর বয়সী সাদেক কামাল এবং ছয় বছর বয়সী কামাল হোসেন। শামসুল এবং তার স্ত্রী মাহবুবে জান তাদের সন্তান দু’জনকে এমন সময় হারিয়েছিলেন যখন তারা সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন। নাজির হারিয়ে যাওয়া দু’ভাইকে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুবই আনন্দিত হয়েছেন। নাজির এই ঘটনার পরে ঘোষণা দেয়ার সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেন। যেসব বাবা-মা সন্তান হারিয়েছে কিংবা সন্তান বাবা-মাকে হারিয়েছে এদের তথ্য নেয়া এবং খুঁজে বের করে পুনর্মিলন ঘটিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রস্তাব দিয়েছে এমন ব্যবস্থা নিতে, যাতে মাইক্রোফোন, ব্যাটারি ও মাইকে হারিয়ে যাওয়াদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়া নিশ্চিত হবে।
হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল এনজিওতে কর্মরত নাজির বলেন, আমার একজন কন্যা সন্তান আছে এবং আমি জানি নিকটজন কেউ হারিয়ে গেলে কেমন কষ্ট অনুভূত হয়।
ইউনিসেফ ও ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস (আইসিআরসি)-এর কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বজন হারানো কিংবা পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুরাই বেশি ঝুঁকিতে আছে। এসব শিশুরা মানব পাচারকারীদের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হারিয়ে যাওয়া সদস্যদের খুঁজে বের করে পরিবারে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট রানস রেস্টোরিং ফ্যামিলি লিংকস (আরএফএল)-এর সাথে যৌথভাবে কাজ করছে আইসিআরসি। যদিও শরণার্থী শিবিরে চিলড্রেন ফ্রেন্ডলি স্পেসেস (সিএফএস) চালু করেছে ইউনিসেফ।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট রানস রেস্টোরিং ফ্যামিলি লিংকস (আরএফএল) এর কর্মকর্তা রাব্বি রহমান বলেছেন,আরএফএল এর তিনটি দল থাইংখালি, বালুখালি এবং কুতুপালংয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আরএফএল হারিয়ে যাওয়া শিশুদেরকে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।-আল জাজিরা
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস