আবু সালেহ আকন, টেকনাফ : মিয়ানমারে বর্মিবাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা যেসব মাদরাসা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মংডুর মিয়াজানপুর জামিয়া মাদরাসা। মংডুর মিয়াজানপুরে যার অবস্থান। আগুন দেয়ার পর ৫ দিন ধরে তা জ্বলে সব কিছু ছাই করে দেয়। কুরআন-হাদিস ছাড়াও শত শত বছরের পুরনো অনেক কিতাব ছিল এই মাদরাসায়। যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করতেন। এই মাদরাসার বেশির ভাগ শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
টেকনাফের উইঞ্চিপ্রাংয়ের ঠিক উল্টো দিকে নাফ নদীর পূর্ব দিকে মিয়াজানপুর। এখানেই অবস্থান দুই শ’ বছরের পুরনো মাদরাসাটির। নাম মিয়াজানপুর জামিয়া মাদরাসা। মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসলিম শিক্ষার্থীরা এই মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসতেন। এখান থেকে অত্র অঞ্চলের অনেক বিখ্যাত আলেম বের হয়েছেন। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ওই মাদরাসাটিতে আগুন লাগায় বর্মি সেনা ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা। ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনী ও নাডালা বাহিনীর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা যেমন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে ছুটে আসেন, তেমনি এই মাদরাসার অনেক ছাত্র-শিক্ষকও মাদরাসা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নেন। তখনো কিছু আলেম ওই মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। রোহিঙ্গারা বলেন, চার একর জমির ওপর এই মাদরাসাটির অবস্থান। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে আগুন লাগানোর পর ৫ দিন সেখানে আগুন জ্বলেছে।
আগুন লাগিয়ে সেখানে উল্লাস করেছে মগরা। ওই এলাকারই বাসিন্দা আব্দুস শুকুরের ছেলে নুর করিম জানান, আগুন লাগানোর দৃশ্য তারা প্রত্যক্ষ করেছেন। ওখানে একটি দোতলা ভবনও ছিল। পুরো কম্পাউন্ডে পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় মগরা। সে সময় বর্মি সেনারা অস্ত্র হাতে পাহারা দেয়। যেসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করছিলেন তাদেরকে ধরে নেয়া হয়।
নুর করিম জানান, ২৫ আগস্টের আগে এই মাদরাসার আলেম ও শিক্ষার্থীদের দেখা করার নির্দেশ দিয়েছিল বর্মি সেনারা। সেনাক্যাম্পে যারা গিয়েছিলেন তাদের কেউ আর ফেরেননি।
নুর করিম বলেন, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসেও এই মাদরাসায় সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। তখন অনেক মূল্যবান কিতাব চুলার আগুনে দিয়ে তাতে ভাত রান্না করে খায় বর্মি সেনারা। ওই সময় তারা রুমে রুমে তল্লাশি চালায়। পরে সব আলেমকে ডেকে নিয়ে সবাইকে সেনাবাহিনীর অভিযানে সহায়তা করার নির্দেশ দেয়া হয়।
মিয়াজানপুরের বাসিন্দা জমির হোসেনের ছেলে ওসমান গনি বলেন, ওই মাদরাসায় ১১২ জন প্রখ্যাত আলেম ছিলেন। যারা সেখানে শিক্ষকতা করতেন। এই মাদরাসায় মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসলিম ছাত্ররা এসে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। ২৫ আগস্টের আগে এই মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের ডেকে নেয়া হয়। যারা সেনাবাহিনীর ডাকে গিয়েছিলেন তাদের কেউ আর ফিরে আসেননি। আর ২৫ আগস্ট অভিযান শুরুর পর অনেকেই মাদরাসা ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু মাদরাসার প্রধান আলেম মৌলভী আব্দুল্লাহ তার পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছিলেন। তার কী দশা হয়েছে তা জানাতে পারেননি নুর করিম ও ওসমান গনি। তারা বলেন, হয়তো পুরো পরিবারসহ মৌলভী আব্দুল্লাহকে মেরে ফেলা হয়েছে।
আব্দুস সালামের ছেলে শামসু বলেন, শুধু মিয়ানমারেই নয়; আশপাশের মুসলিম দেশগুলোর আলেম-ওলামাদের কাছে এই মিয়াজানপুর মাদরাসাটি অতি পরিচিত। শত শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য এই মাদরাসাটি। বর্মি সেনাবাহিনী ও উগ্র মগদের দেয়া আগুনে পুড়ে ৫ দিনে তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস