মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭, ০৯:১৮:০০

পলিথিনের ঝুপড়িতে শত কোটি টাকার মালিক!

পলিথিনের ঝুপড়িতে শত কোটি টাকার মালিক!

নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের মংডু থানার ফকিরাবাজার গ্রামের বিত্তশালী রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ (৬০)। মুসলিম অধ্যুষিত ওই বাজারে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফকিরাবাজারে তার চারটি স্বর্ণের দোকান ছিল। চাষাবাদের জমি ছিল ৮০ কানি। গরু-মহিষ-ছাগল ছিল অগণিত। ১০-১২ জন কৃষক সারা বছর কাজ করতেন। এলাকার সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বাড়িতে স্ত্রী-পরিজন নিয়ে ছয়জনসহ ১৮-২০ জনের সংসার সুখেই কাটছিল। মিয়ানমার জান্তারা এক দিনেই আগুন দিয়ে নিঃস্ব করে ফেলেছে। কোটিপতি থেকে মুহূর্তেই হয়ে গেলেন পথের ফকির। এখন কুতুপালংয়ের ঝুপড়িতে ত্রাণের জন্য কাঙ্গালের মতো চেয়ে থাকতে হচ্ছে।

আরাকান রাজ্যের সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে সব দোকান, বাড়িসহ সহায়সম্পত্তি ফেলে চলে আসেন বাংলাদেশে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে এক ভদ্রলোক ছোট শিশুদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রথমে দেখে এই প্রতিবেদক একটু ভাবান্বিত হন। তারপর কাছে গিয়ে তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এলাকায় সম্পদশালী ও তৎকালীন হুক্কাট্টা (চেয়ারম্যান) হিসেবে আইন প্রয়োগকারীরাসহ রাখাইনের লোকজন তাকে সমীহ করে চলতেন। প্রশাসনের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে তার মেলামেশা ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা আমাকে কথাও দিয়েছিল এখানে নির্ভয়ে থাকা যাবে, কেউ কিছু করবে না; কিন্তু কথায় আর কাজে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৫ দিন আগে একরাতে মিয়ানমার সেনারা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। মনে করছিলাম হয়তো তারা কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ করতে এসেছে।

এমনটি মনে করে আমি বাড়ির লোকজনদের চা-নাশতা তৈরি করতে বলি। এ ফাঁকে রাখাইনের সশস্ত্র যুবকেরা আমার শয়নকক্ষে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার লুট করতে থাকে। একপর্যায়ে আমার বুকে বন্দুক তাক বলে, এ মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যা, নইলে সবাইকে পুড়ে মরতে হবে। এ সময় আমার হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হওয়ার মতো অবস্থা। প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে সবাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মিয়ানমার সেনারা আমার দ্বিতল বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই আগুনের আলোতে আমরা অনেক দূরে চলে এসেছি। কথাগুলো বলতে বলতে তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। তিনি আরো জানান, এর আগে হায়েনার দল আমার স্বর্ণের দোকান লুট করে জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা আমার মোটেই জানা ছিল না। আসার সময় পাড়ার প্রতিবেশীরা আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও জ্বালিয়ে দেয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। ওই দোকানগুলোতে প্রায় শত কোটি টাকার (কিয়াতের) স্বর্ণালঙ্কার ছিল বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি গত বৃহস্পতিবার। আমার গ্রামের লোকজন থাকার জন্য পলিথিনের একটা ঘর নির্মাণ করে দেয়। সে ঘরে অবস্থান নিলেও আমার অন্তর আত্মা বারবার কেঁপে উঠছিল সেই মিয়ানমারের সেনাদের বর্বরোচিত আচারণ ও চোখের সামনে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্যটি। কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইÑ গরু, মহিষ পাওয়া যাবে কি না? জবাবে দিল মোহাম্মদ জানান, যেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুট হয়ে গেছে সেখানে গরু-ছাগলের হিসাব করে লাভ কী? আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে যত দিন থাকতে হয় এখানেই থাকব। তিনি জানান, বাংলাদেশের ওপর আমার অনেক আস্থা আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে এখানকার অনেক বড় বড় লোককে আমার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি। খাওয়াদাওয়া করিয়েছি।

এমনকি অনেকেই দীর্ঘ সময় রাতযাপনও করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মরহুম শমশের আলম চৌধুরী, মরহুম বিকম আলী আহমদ, মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রামের লে. কর্নেল হারুন অর রশিদসহ আরো অনেক নাম না জানা লোকজন। তাদের স্ত্রী, পুত্র অথবা স্বজনদের কেউ যদি আমার পরিচয় জানতে পারেন বা আমি যে কুতুপালং ক্যাম্পের আশ্রয়ে রয়েছি জানতে পারেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আমার প্রতি সহানুভূতি জানাতে এগিয়ে আসবেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে