কক্সবাজার থেকে : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ঝগড়া-বিবাদ, কথায় কথায় উগ্র আচরণ, ছুরিকাঘাতে খুনসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এই অংশটি।
শুধু নিজেদের ভিতরই ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হচ্ছে তা নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপরও চড়াও হচ্ছে এখন রোহিঙ্গারা। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ফলে দিন দিন এখানকার পরিবেশ হয়ে উঠছে অসহিষ্ণু, অপ্রীতিকর।
সর্বশেষ গতকাল বিকালে রামুতে এক রোহিঙ্গা যুবকের হামলায় আবদুল জব্বার (২৮) নামে স্থানীয় এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে রোহিঙ্গাদের হামলায় আহত হয়েছেন স্থানীয় চার ব্যক্তি।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এমএসএফ পরিচালিত হাসপাতাল ও একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের দুজন নলকূপমিস্ত্রি বলে জানা গেছে।
উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাত ১টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ডাকাত সন্দেহে স্থানীয় কয়েক বাংলাদেশির ওপর রোহিঙ্গারা হামলা চালায়। এতে চারজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে। আহতরা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন।
এদিকে ক্যাম্পের অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, রাতে কয়েকজন অপরিচিত লোক বালুখালীর একটি অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করেন। তারা মূলত একটি গভীর নলকূপ বসানোর কাজেই ওই ক্যাম্পে গিয়েছিলেন। অপরিচিত হওয়ায় ডাকাত ডাকাত বলে কেউ একজন চিৎকার শুরু করলে আশপাশের শতাধিক তাঁবু থেকে মুহূর্তেই লোকজন বের হয়ে তাদের ধাওয়া করেন।
একপর্যায়ে হাতের নাগালে পেয়ে গণপিটুনি শুরু করেন। এতে গুরুতর আহত হন চারজন। অপ্রীতিকর এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর রোহিঙ্গা দুই সহোদরের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবু ছিদ্দিক। দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২১ অক্টোবর ভোরে তিনি মারা যান। মহিষ বিক্রিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোছনের ছেলে কালা মিয়া ও ধলা মিয়ার সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে আবু ছিদ্দিককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়।
সর্বশেষ শনিবার টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকে রোহিঙ্গা নারী দিলবাহার ও তার স্বামী সৈয়দ আহমদ অবৈধভাবে একটি মুদির দোকান বসানোর চেষ্টা করছিলেন। এতে নয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) কবির আহমদ বাধা দিলে রোহিঙ্গা দম্পতি তার ওপর চড়াও হন। এ ঘটনায় এসআই কবিরের মাথা ফেটে গেলে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রামুতে রোহিঙ্গা যুবকের হামলায় একজন নিহত, আটক ২ : কক্সবাজারের রামুতে এক রোহিঙ্গা যুবকের হামলায় এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত আবদুল জব্বার (২৮) উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের খেদারঘোনা এলাকার বশির আহমদ ফকিরের ছেলে।
গতকাল বিকাল ৩টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে রামু থানার ওসি মো. লিয়াকত আলী জানান। এ ঘটনায় দেড় মাস আগে মিয়ানমার থেকে এসে খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের খেদারঘোনায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জিয়াবুল হক (২২) ও তার ফুফু ভেওলা খাতুনকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ।
ওসি বলেন, ভেওলা খাতুন বেশ কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে এসেছেন। উখিয়ার কোটবাজার এলাকা থেকে বছরখানেক আগে খুনিয়াপালংয়ের খেদারঘোনায় শুক্কুর নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে বন বিভাগের জমির দখল বুঝে নিয়ে তিনি ঘর তোলেন।
মাসখানেক আগে সেখানেই আশ্রয় পান তার ভাইপো জিয়াবুল। সামাজিক বনায়নের ওই জমি নিয়ে শুক্কুর ও আবদুল জব্বারের মধ্যে বিরোধ ছিল। গতকাল সকালে বাগান পাহারা দেওয়ার সময় আবদুল জব্বারের ওপর হামলা চালান জিয়াবুল ও ভেওলা খাতুন।
স্থানীয়রা জব্বারকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে জানান ওসি। তিনি বলেন, নিহতের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ বলেন, ওই জমি বন বিভাগের। তা আগে শুক্কুরের দখলে ছিল। শুক্কুর টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা ভেওলা খাতুনের কাছে দখল ছেড়ে দেন। ভেওলার স্বামী থাকেন মালয়েশিয়ায়। ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে ওসি লিয়াকত জানান। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসএস