নিউজ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সড়কের দুপাশে দাঁড়ানো দলীয় নেতাকর্মী ও উত্সুক জনতার সঙ্গে ছিলেন অনেক রোহিঙ্গাও। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানারও ছিল তাঁদের অনেকের হাতে।
গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গাশিবিরের প্রবেশপথে দেখা গেছে ওই দৃশ্য। মহাসড়কের দুপাশে শত শত রোহিঙ্গার সারি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় গ্রামীণ বাসিন্দারাও।
রোহিঙ্গাদের একজন মোহাম্মদ ইসমাইল। তাঁর মাথায় ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ লেখা কাগজের তৈরি টুপি। চোখেমুখে খুশি আর আনন্দের ঢেউ। জানতে চাইলে রোহিঙ্গা ইসমাইল বলেন, ‘‘রাখাইনের মংডু থেকে মাস দেড়েক আগে এসেছি। এখানে দাঁড়িয়েছি ‘রাজা’ খালেদাকে দেখার জন্য। তাঁকে এর আগে কখনো দেখিনি।’’
তিনি জানান, এখানে আসার পর গ্রামের স্থানীয় লোকজন মাথায় কাগজের তৈরি টুপিটি পরিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে একটি ব্যানারও।
একই স্থানে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিল শত শত মানুষ। এগিয়ে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘‘আমার নাম আবদুর রকিম। রাখাইনের ভুচিদং থেকে মাসখানেক আগে এসেছি। আজ আমাদের এখানে ‘রাজা’ আসছেন। তাই দেখতে এসেছি। ’’
রোহিঙ্গা রকিম আরো বলেন, ‘‘১৯৯২ সালেও পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম ঘুংধুম রোহিঙ্গা শিবিরে। সেই সময় খালেদা ছিলেন এ দেশের ‘রাজা’। ’’
সড়কের ওপারে দাঁড়ানো মানুষের সারির ডিজিটাল ব্যানারে খালেদার ছবি দেখিয়ে রকিম বলেন, ‘ওই যে রাজার ছবি!’ এ সময় মহাসড়কের দুপাশে সারিতে দাঁড়ানো কেবল এক-দুজন নয়, শত শত রোহিঙ্গা ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে পালংখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির আহমদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যদি আমাদের নেত্রীকে ভালোবেসে লাইনে দাঁড়িয়ে যান তাহলে আমাদের করার কি আছে?’
অপরদিকে শফিউল্লাহকাটা রোহিঙ্গা শিবিরের গতকালের অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোকতার আহমদ বলেন, ‘সড়ক ধারে লাইনে দাঁড়ানোদের মধ্যে কে রোহিঙ্গা আর কে গ্রামবাসী তা চিহ্নিত করা ছিল কঠিন। ’
গতকাল সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাশিবির পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। কক্সবাজার থেকে উখিয়ার পালংখালী শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গাশিবিরের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার।
এদিকে রবিবার বিএনপি চেয়ারপারসন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আসার পথে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিপুলসংখ্যক লোকজনের সমাগম হলেও কক্সবাজারের সীমান্ত জনপদে গতকাল দৃশ্যপট ছিল ভিন্ন। টেকনাফ মহাসড়কের দুয়েকটি স্থান ছাড়া সবখানে ছিল রোহিঙ্গায় একাকার।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুতুপালং রোহিঙ্গাশিবির, বালুখালী-১ ও ২ নম্বর রোহিঙ্গাশিবির এবং থাইনখালীর হাকিম মিয়াপাড়া রোহিঙ্গাশিবির এলাকার সড়কের দুধারে ছিল রোহিঙ্গার সারি।
তবে এ প্রসঙ্গে কুতুপালং রোহিঙ্গাশিবিরের শেডমাঝি (রোহিঙ্গা সর্দার) আবদুল হামিদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আসলে এদেশের সরকার আর বিরোধী দল সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না। তবে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাম জানেন। ’ তিনি জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফরের সময় নিরাপত্তার কারণে কড়াকড়ি থাকায় সব রোহিঙ্গা তাঁকে দেখতে পারেননি। তাই এবার বেগম জিয়ার আগমনে রোহিঙ্গারা সুযোগ পেয়ে সড়কে নেমে আসেন।-কালের কণ্ঠ
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস