কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিমান বাহিনীর দু’টি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিধ্বস্ত হয়েছে মাইজপাড়ায়, অন্যটি পুটিবিলা এলাকায়। দুই প্রশিক্ষণ বিমানের চার পাইলটকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনও জানা যায়নি দুর্ঘটনার কারণ। কি ঘটলো সেখানে?
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, যেখানে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখান থেকে আরও প্রায় এক কিলোমিটার আগে আকাশ থেকেই বিমানের কিছু অংশ খসে পড়ে। অনেকে বলছেন, আকাশে আগুনের ফুলকি দেখে প্রথমে আতশবাজি মনে করলেও পরে জানতে পারেন, এর উৎস বিমান দুর্ঘটনা।
আবু কায়ছার নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে এর একটি অংশ ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে লম্বাঘোনা বাজারের কাছে খসে পড়ে। তারা ভাঙা অংশ ঠিকমতো দেখার আগেই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার শব্দ পান।
মহেশখালীর গোরকঘাটা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘সন্ধ্যার পরই আমরা বিকট একটি শব্দ শুনতে পাই। এর পরপরই পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান সরওয়ার আজমের বাড়ির পেছনে খালি জায়গায় আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। আগুন দেখে ও শব্দ শুনে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে ভিড় করেন। ফায়ার সার্ভিসের মহেশখালী ইউনিটের সদস্যরাও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ‘একটি বিমান ওই এলাকার জনৈক আব্দুস সাত্তারের বাড়ির ওপরের অংশ উড়িয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতে বিধ্বস্ত হয়। ওই সময় আঁখি (১৫) নামে এক কিশোরী আহত হয়েছে। বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।’
মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের জাগিরাঘোনা এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মহেশখালী থেকে কক্সবাজার ফিরছিলাম। পথে ঘোরকঘাটা এলাকায় এসে দেখি, আকাশে আলোকছটা। প্রথমে মনে করছিলাম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আতশবাজি। কিন্তু পরে জানতে পারি, সংঘর্ষে দু’টি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা এলাকায় বসবাসরত শাহ আলম বলেন, ‘মাগরিবের আজানের পরপর মহেশখালী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে আমরা রিকশায় করে যাচ্ছিলাম। সাড়ে ৬টার দিকে দু’টি বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। তখন দেখলাম, আকাশে আগুনের দু’টি গোলা। এর একটি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে, আর অন্যটি দেখলাম ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে মাইজপাড়ায় পড়ছে।’
একই কথা বলছেন বৃদ্ধা মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়াও। তিনি বলেন, ‘আমরা দোকানে বসে গল্প করছিলাম। এসময় হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয় এবং আকাশে আলোর ঝলকানি দেখি। এতে আমরা ভয় পেয়ে যাই। পরে মানুষের জটলা ও আর্তচিৎকারে আমরা এগিয়ে যাই।’
এদিকে, দুর্ঘটনার পরপরই দুই বিমানে থাকা চার জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে তিন জনকে চট্টগ্রামে সামরিক হাসপাতাল ও আরেকজনকে রামুতে সেনাবাহিনীর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, বিধ্বস্ত বিমান দু’টির একটিতে ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শরীফ ও স্কোয়াড্রন লিডার মনির। অন্যটিতে ছিলেন উইং কমান্ডার আজিম ও রাজীব। চার পাইলট বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৬ মিনিটে প্রশিক্ষণ বিমান দু’টি নিয়ে উড্ডয়ন করেন। ৫০ মিনিট পর কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) সূত্র জানায়, কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বিমান দু’টি। দুটি বিমানের মডেল ইয়াক-১৩০।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা
বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছে। ধ্বংসস্তূপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ। বিমান বাহিনীর একটি দলও ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর