নিউজ ডেস্ক: কেউ ইচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায় দেহব্যবসায় জড়াচ্ছেন রোহিঙ্গা নারীরা৷ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেহব্যবসায় রোহিঙ্গা মেয়ে এবং নারীদের যোগ দেয়ায়ও বাড়ছে৷পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী৷
কক্সবাজারের কিছু সস্তা হোটেলে রোহিঙ্গা মেয়েরা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন৷ খদ্দেরপ্রতি রেট পাঁচশ’ টাকা৷ তবে এই টাকার মধ্যে সত্তর টাকার মতো পান৷ সেই টাকা আবার অনেক সময় সরাসরি তার কাছে পৌঁছায় না৷ বরং তার আত্মীয়-স্বজন কেউ সেটা নিয়ে যান৷
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পতিতাবৃত্তিতে জড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কথাগুলো বলেন নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি তার মুঠোফোনে কয়েকজন নারীর ছবিও দেখান, যারা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আটক হয়েছেন৷
ধারণা করা হয়, শারীরিক কাজ করতে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন তারা৷কক্সবাজার জেলার উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলায় এখন প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন৷ এত বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী যেখানে, সেখানে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটার শঙ্কা থেকেই যায়৷ নিরাপত্তা বাহিনী চেষ্টা করছে, শরণার্থীরা যাতে শিবির ছেড়ে অন্যত্র যেতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে৷ এজন্য শরণার্থী শিবিরগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে৷ মানবপাচার রোধ এ সব চৌকির অন্যতম দায়িত্ব৷
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় বাঙালি আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্য কীভাবে করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে সেই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে তারা শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে কিনা৷ যদি না পারে, তাহলে তারা রোহিঙ্গা৷ এছাড়া, সন্দেহজনক কিছু মনে হলে আরো যাচাই-বাছাই করা হয়, বলে জানান তিনি৷
ভাষা পরীক্ষার এই প্রক্রিয়াটি ভালো৷ কিন্তু যেসব শরণার্থী কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন কিংবা বাংলাদেশের সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি মিয়ানমারে যাদের বাস, তাদের অনেকে শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে৷ ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ এড়ানোর মতো ভাষা অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর পক্ষে বলা সম্ভব৷
আর শুধু কক্সবাজারই নয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আশেপাশের জঙ্গলে, পাহাড়েও দেহব্যবসা চলে বলে জানিয়েছেন একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ অনেকে সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন৷ কেননা, কারো কারো কাছে নগদ টাকা আয়ের অন্যতম উৎস এটি৷
ঠিক কতজন রোহিঙ্গা নারী এমন কাজ করছে, এমন পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই৷ সংখ্যাটা যে বাড়তির দিকে সেকথা নিশ্চিত করেছে একাধিক সংগঠন৷ আর মাঝেমাঝেই জানা যায় যে, অনেক নারীকে জোরপূর্বক এই ব্যবসায় নামানো হচ্ছে৷ কেউ কেউ বিক্রি হচ্ছেন লালসার দাসী হিসেবে৷ কিছুদিন আগে আল-জাজিরায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে খাতুন (ছদ্মনাম) নামের এক পনের বছর বয়সী কিশোরীর কথা জানা যায়, যে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশের পরপরই দাসী হিসেবে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল৷ এরপর কয়েকদিন শারীরিক নির্যাতন করার পর তাকে ছেড়ে দিয়েছিল৷
মর্জিনা (ছদ্মনাম) নামের আরেক তরুণী জানিয়েছেন, তার উপর ঘটে যাওয়া নির্মম নির্যাতনের কথা৷ কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের কাছ থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর তাকে নিযার্তন করা হয় এবং একপর্যায়ে দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়৷ পুলিশের সহায়তায় মর্জিনা ফিরে এসেছেন বটে, কিন্তু এখন গর্ভে থাকা জমজ সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত তিনি৷ ইতিমধ্যে একাধিকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন তিনি৷
মর্জিনাদের মতো নির্যাতনের শিকার মেয়েদের সহায়তা করার জন্য গোপনে গর্ভপাতের ব্যবস্থা করে একটি সংস্থা৷ কোনো কোনো নারী সেই সুবিধা গ্রহণও করেছেন৷ কিন্তু মর্জিনা গর্ভপাতে রাজি নন৷ কেননা, গর্ভের সন্তানদের কোনো অপরাধ নেই বলে মনে করেন তিনি৷ মর্জিনা চান, গোপনে সন্তান জন্ম দিতে৷ এরপর সেই সন্তান কাউকে দত্তক দিয়ে দিতে চান তিনি৷ তবে সেটা কতটা সম্ভব তা তিনি নিজেও নিশ্চিত নন৷ এ রকম কোনো ব্যবস্থা কোনো সংগঠন করছে বলেও জানা যায়নি৷
মিয়ানমারে কিংবা বাংলাদেশে শারীরিক নির্যাতনের শিকার নারীদের সুরক্ষায় কাজ করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা৷ এসব সংগঠনের মধ্যে অন্যতম আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম৷ সংগঠনটির কক্সবাজার এলাকার মুখপাত্র ফিয়োনা ম্যাকগ্রেগর স্বীকার করেছেন, রোহিঙ্গা সংকট এতটাই বিস্মৃত এক বিষয় যে, সবকিছু সামাল দিতে তাদের আরো অনেক সহায়তা এবং সময় প্রয়োজন৷ সংগঠনগুলো কাজের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বটে, তবে এজন্য প্রচুর সময়ের প্রয়োজন৷
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে কারো কারো এইচআইভি সংক্রমণ রয়েছে৷ গত কয়েকদিন আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অন্তত পাঁচ হাজার এইচআইভি পজেটিভ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে রয়েছে৷ দেহব্যবসার মাধ্যমে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস যদি বাংলাদেশিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা হবে ভয়ানক এক ব্যাপার৷ তাই এই বিষয়ে আরো সতর্কতা জরুরি৷ সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি