কক্সবাজার: কক্সবাজারের বালুখালি শরণার্থী শিবিরের ২৫ জন এতিম রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা, খাদ্য ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আরবি ও কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চেষ্টা চলছে তাদের নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে বের করার।
এদের সবাই রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে হারিয়েছে তাদের বাবা, মা কিংবা ভাইকে। দেখেছে চোখের সামনে তাদের স্বজনদের হত্যা করতে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মোহাম্মদ বেলাল বলেন, 'আমাদের বাড়ি মিয়ানমারের ক্রাউক প্রাং গ্রামে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাতে আমাদের ঘরে ঢুকে আমার বাবা ও মা দুজনকেই হত্যা করে। আমার বোন এখনো নিখোঁজ।'
মোহাম্মদ আমান বলেন, 'সেনাবাহিনী আমার বাবা-মাকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে। সবার সঙ্গে আমিও পালিয়ে এসেছি।'
মিয়ানমারের নির্যাতন থেকে মুক্তি মিললেও, নতুন আশ্রয়স্থলে ভয় আর শঙ্কা নিত্যসঙ্গী। একদিকে বন্য হাতি কিংবা বিষাক্ত সাপ, অন্যদিকে রাতের অন্ধকারে পাচার হয়ে যাওয়ায় ভয়। স্বস্তি আর নিশ্চিন্ত জীবন কোথায়।
এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলো স্থানীয় একটি মাদ্রাসা। তাদের সাধ্যমত ২৫ শিশুর যাবতীয় দায়িত্ব নিলো মাদ্রাসাটি। একইসঙ্গে এই শিশুদের পরিবারের নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতেও কাজ করছে বলে জানালো মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
রোহিঙ্গা এই শিশুরা তাদের নিজস্ব পরিসর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন একটি পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, আরবি ও কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি তাদের সুস্থ- সুন্দর জীবনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ রফিক বলেন, 'এদের কারোরই বাবা-মা বেঁচে নেই, তারা সবাই এতিম। এতিমখানার পক্ষ থেকে আমরা তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সেইসঙ্গে এখানে তাদের আরবি ও কোরআন শিক্ষাও দেয়া হয়।'
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু শনাক্ত করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশের ঠিকানা হয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস