নিউজ ডেস্ক : মরণ নেশা ইয়াবা বেচাকেনা করে কক্সবাজারের টেকনাফে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়েছে অনেকে। সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে এসব বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে তালিকাভুক্ত ‘বাবা’রা (ইয়াবা ব্যবসায়ীরা)।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইয়াবার টাকায় টেকনাফের লেদা, নেঙ্গরবিল, পৌরসভার চৌধুরীপাড়া, দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, ডেইলপাড়া, শিলবনিয়াপাড়ায় রাজপ্রাসাদের মতো গড়ে উঠেছে সারি সারি বাড়ি। তবে এসব বাড়ি এখন খালি পড়ে আছে, পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাড়ির মালিক মাদক ব্যবসায়ীরা। অভিযান এড়াতে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র বসবাস করছে তারা। মাদকের টাকায় বানানো এই রাজপ্রাসাদ পাহারা দিতে তারা বসিয়েছে সিসি ক্যামরা। আবার কেউবা বাড়িতে রেখে গেছে গরিব কোনও নিকটাত্মীয়কে।
টেকনাফের মৌলভীপাড়ায় রাস্তার পূর্বে পাশে বাড়ি বানিয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুর রহমান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে মৌলভীপাড়ায় সবার শীর্ষে তার অবস্থান। এলাকায় সবাই তাকে ‘বাবা’ নামে চেনেন। সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে আবদুর রহমান নিজের বাড়িতে থাকছে না। তার আরেক ভাই একরামুল হোসেনও তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তারা দুজনই টেকনাফের মৌলভীপাড়ার হাজী ফজল আহমদের ছেলে।
পুলিশ ও সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ইয়াবা ব্যবসা করে সাত বছরে কোটিপতি হয়েছে আবদুর রহমান। সে টেকনাফের মৌলভীপাড়ার অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। গ্রামের ঠিক পেছনে নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে ইয়াবার চালান এনে খালাস করতো সে। তারপর সেই ইয়াবার চালান পৌঁছে দেওয়া হতো কক্সবাজার শহর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ইয়াবা সরবরাহের জন্য তার রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট।
তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুর রহমানের বাড়িআর সাত বছর আগেও একরাম হোসেন ছিল বেকার যুবক। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার গড়ে ওঠে সম্পর্ক। সেই সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে। ইয়াবা চোরাচালানের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে একরাম হোসেনের একটি চক্র রয়েছে।
২০১১ সালের দিকে টেকনাফের একজন প্রভাবশালী ইয়াবা গডফাদারের নজরে পড়ে একরাম হোসেন। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সাত বছরে ইয়াবার ব্যবসা করে বিপুল টাকার মালিক হয়েছে সে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত সাত বছরে একরাম হোসেন নামে-বেনামে শহরে দুটি ভবন, জমি, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারসহ বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছে। সূত্রের দাবি, মাদকবিরোধী অভিযান যে শুরু হবে, এ খবর আগে সে থেকেই পেয়ে যায় এবং তারপরই আত্মগোপনে চলে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৮ জুলাই (শুক্রবার) ভোরে টেকনাফ থানার পুলিশের হাতে আটক হয় আবদুর রহমান। এর আগে সে কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা, হত্যা, হামলা, সরকারি কাজে বাধা, মারপিটসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে।
তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হুদার বাড়িখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই মুজিবুর রহমান, ফয়সাল ও শফিকের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি রয়েছে টেকনাফের জালিয়াপাড়ায়। বদির আরেক ভাই আবদুস শুক্কুর বাড়ি বানিয়েছেন টেকনাফের অলিয়াবাদে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি মাদক ব্যবসায়ীদের নতুন ও পুরনো তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। এছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে—টেকনাফের নুরুল হুদা, মো. জোবাইয়ের, নুরুল বশর নুরশাদ, মো. সালমান, মো. হাসান আলী, বদির ফুফাট ভাই কামরান হাসান রাসেল, নূর মোহাম্মদসহ অনেকের। বদির বেয়াই আকতার কামাল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের পর তারা সবাই অন্যত্র রাত কাটাচ্ছেন। ইয়াবা ব্যবসার কোটি কোটি টাকা দিয়ে বানানো তাদের বাড়িগুলো এখন শূন্য পড়ে আছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ভয়ে তালিকাভুক্ত এই ইয়াবার ‘বাবা’রা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ায় তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদাররা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। ইয়াবার টাকায় যারা রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়েছে, তাদের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্সের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদক ব্যবসা করে অনেকে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছে। কৌশল পাল্টে এখন অন্যত্র অবস্থান করলেও তারা ছাড় পাবে না। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
টেকনাফ-২ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী বলেন, ‘মাদক ঠেকাতে বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে। সীমান্ত পেরিয়ে যাতে ইয়াবার গডফাদাররা পালাতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে বিজিবি।’বাংলাট্রিবিউন।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস