উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে থেকে আপাতত লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহন করেছে সরকার। এ লক্ষে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা ভাসানচরে দ্রুত এগিয়ে চলছে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজ। ইতিমধ্যে বেড়িবাঁধ, বাসস্থান, সাইক্লোন শেল্টার, মসজিদ, অভ্যন্তরীন সড়ক ও বিদ্যুৎতায়নসহ প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২২ সেপ্টম্বর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উখিয়ার ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ রেড়ক্রিসেন্ট সোসাইটি আয়োজিত জনসভায় বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে সরকার কাজ করছে। কারণ ব্যখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি পর্যটন এলাকা। ১১ লাখ বাড়তি রোহিঙ্গা জনগোষ্টীর চাপ বহন করার মতো সামর্থ কক্সবাজারের নাই। তাছাড়া রোহিঙ্গার কারনে এখানে আর্থ সামাজিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই আপতত পরীক্ষামূলকভাবে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চলতি মাসের যে কোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাসানচরের রোহিঙ্গা বসবাসযোগ্য নবনির্মিত প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
ত্রাণমন্ত্রীর এমন বক্তব্যর ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে চলছে ভাসানচরে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কানাঘুষা। অনেক রোহিঙ্গা নেতা বলছে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে জমিজমা, সহায় সম্বল সর্বস্ব হারিয়ে এদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাও আবার প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারনে। তিনি যদি আশ্রয় না দিতেন তা হলে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার পরিণতি কি হতো তা বিশ্ববাসী ইতিমধ্যে বুঝতে ও জানতে সক্ষম হয়েছে।
রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহমান (৪৫) জানান, এখানে ৫০ হাজারের অধিক পরিবার রয়েছে যারা কাউকে না কাউকে হারিয়েছে। মিয়ানমার সেনা ও উগ্রপন্থি রাখাইন দুর্বৃত্তের হাতে ধর্ষনের শিকার হয়েছে হাজারের অধিক নারী। তারা বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়ে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা গ্রহন করলেও মিয়ানমার সেনা কর্তৃক বর্বরোচিত নির্যাতনের ভয়াবাহ দৃশ্যপট তাদের মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। এমতাবস্থায় তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ত্যাগ করে অন্য কোথাও যেতে চান না।
রোহিঙ্গা মাঝিদের নেতা শফিউল্লাহ (৩৮) জানান, তারা (রোহিঙ্গারা) নিজ মাতৃভুমিতে ফিরে গিয়ে আবার নতুন করে সংসার জীবন শুরু করতে চান। তবে দায়সারা ভাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে অথবা ভাসানচরে পাঠানোর চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হবে। কারন রোহিঙ্গাদের একটা দাবি তারা রোহিঙ্গা নাগরিক। তাই মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকত্ব নিয়ে ফিরে যেতে পারলেই তারা স্ব ইচ্ছায় এদেশ ত্যাগ করতে বিন্দু মাত্র কুণ্ঠা বোধ করবে না।
জানা গেছে, ১২ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্য ১৪ কিঃ মিঃ প্রস্থের জেগে ওঠা ভাসানচর নামের এ ভূ-খণ্ডকে রোহিঙ্গাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গীকে সাজানো হয়েছে। এখানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অভাবমুক্ত পরিবেশে জীবন যাপন করার জন্য নির্মান করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি টিনশেড পাকাঘর। প্রতিটি শেডে রয়েছে ১৮টি কক্ষ। প্রতি ৪ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে একটি করে সুপরিসর কক্ষ। প্রতি কক্ষে থাকছে দ্বীতল ভবনের একটি কক্ষে দুটি বেড। মাটি থেকে ৪ ফুট উঁচুতে নির্মিত বাসস্থানকে করা হয়েছে সম্পূর্ণ আপদমুক্ত।
ঝড় ও জলোচ্ছাস থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ রাখার জন্য ১৪ কিঃমিঃ বেড়িবাধ ও ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে দাবি করে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাশ বলেন, ভাসানচরে পুনর্বাসিত রোহিঙ্গাদের সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। চলতি মাসে এটি পূর্ণাঙ্গ আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মন্নান জানান, ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের বসবাস উপযোগী করে তোলা হলেও রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে স্ব ইচ্ছায় যান সে ভাবে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে কালক্ষেপন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আপাতত সেখানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সরকারের রয়েছে।-ইত্তেফাক