কক্সবাজার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইকালে নানা অভিযোগে স্থগিত হওয়া ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াতের চার প্রার্থী অবশেষে বৈধতা পেয়েছেন। শুনানি শেষে কক্সবাজার-৩ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজল ও কক্সবাজার-২ আসনের জামায়াত নেতা এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, নবম জাতীয় সংসদে কক্সবাজার-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমানে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন জমা দেয়া ড. আনসারুল করিম এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে জাপা মনোনীত প্রার্থী মাস্টার এমএ মনজুরকে বৈধ ঘোষণা দিয়েছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। নানা অভিযোগে এ চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
রোববার সকাল ১০টা থেকে কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে চলা বাছাই প্রক্রিয়া শেষে চারজনের মনোনয়ন বাতিল ও চারজনের স্থগিত করেছিলেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। বিকেল ৪টা থেকে শুনানি শুরু করে সন্ধ্যার পর তাদের বৈধ বলেই সিদ্ধান্ত দেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
এদিকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত হয়েছে জেনে সরকারদলীয় নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরোয়ার কমলের সমর্থকরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে তা স্থায়ী বাতিলের জন্য নানা স্লোগান দেন। পাশাপাশি নৌকা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেও স্লোগান দেন সমর্থকরা।
আবার সন্ধ্যায় প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার ঘোষণা আসার পর বিএনপি প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলের সমর্থকরা জেলা বিএনপি অফিস ও হোটেল নিরিবিলি এলাকায় ধানের শীষ ও কাজলের পক্ষে নানা স্লোগান দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।
এছাড়া কক্সবাজারের মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন, ট্যাক্স ফাঁকি ও সম্পদের পূর্ণ বিবরণী না দেয়ায় কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ, প্রার্থীর পক্ষে নেয়া স্বাক্ষরে জালিয়াতির অভিযোগে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক, অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্রের কারণে কক্সবাজার-৩ (সদর- রামু) আসনে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
বাছাই কালে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনকে সহযোগিতা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার, জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমদসহ সকল সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ সময় প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের ৫১২ ভোটকেন্দ্রের ২ হাজার ৭৩৮ ভোট কক্ষের অধীনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। সেখানে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন নারী ভোটার।
জেলার চারটি সংসদীয় আসনেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।
জানা গেছে শুধুমাত্র মহেশখালী-কুতুবদিয়া একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। ববি হাজ্জাজের দল জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) কক্সবাজার-৩ বাদে তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৩৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এতে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) ৮ জন, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) ১২ জন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) ৬ জন এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ৮ জন মনোনয়ন জমা দেন।
তফসিল অনুসারে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে রোববার (২ ডিসেম্বর) বাছাই করা হয়। সেখানেই ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বাকি ৩০ প্রার্থী বৈধতা পেয়েছেন বলে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাইলে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। এ পর্বের পর ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতীক বরাদ্দের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন।-জাগো নিউজ