কক্সবাজার : কক্সবাজারের উখিয়ায় নতুন করে পাহাড় কেটে আরো একটি রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ডজন খানেক বুলডোজার দিয়ে পাহাড়ের পর পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। বর্ষা আসন্ন নিয়ে পাহাড় কাটার ফলে এলাকাবাসীর উদ্বেগও বাড়ছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চৌখালী নামক পাহাড়ী এলাকার আগর বাগানটি ধ্বংস করে চলছে আরো একটি রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের এমন কর্মযজ্ঞ।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে রোহিঙ্গা শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি)। এনজিও সংস্থা ব্রাক ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সেখানে বোল্ডডোজার দিয়ে বনভূমির পাহাড় কেটে মাঠ ও চলাচলের রাস্তা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বনকর্মীরা জানিয়েছেন, এলাকার আগর বাগানটিতে বিপুল অংকের আগর গাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির বাগান নিধন করে শিবির স্থাপন করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেননা প্রতিদিনই কেটে ফেলা হচ্ছে আগরসহ হাজার হাজার নানা প্রজাতির গাছ পালা। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।
জানা গেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাধীন থাইংখালী বনবিটের মোছারখোলা টহল ফাঁড়ির চৌখালী নামক স্থানটিতে শতাধিক হেক্টর জমি রয়েছে আগর বাগানের। আগর বাগানের গাছপালা ধ্বংস করেই শতাধিক একর বনভূমি ও জোত জমিতে নতুন করে রোহিঙ্গা শিবিরটি স্থাপন করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালামসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা এলাকায় শিবির নির্মাণের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। সৈয়দ নুর নামের একজন এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি উচু পাহাড় কেটে সমতল করা হয়েছে। এনজিও সংস্থা ব্রাকের পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ, লেট্টিন বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সেট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
পালংখালীর গ্রামবাসী আলী আহমদ জানান, ‘বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে নতুন-পুরাতন মিলে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে বন বিভাগ প্রায় বিলুপ্তির পথে বসেছে। তারপরেও রোহিঙ্গাদের জন্য জমি দেওয়ার কাজ শেষ হচ্ছে না।
পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মঞ্জুর জানান, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার উখিয়া-টেকনাফে ২টি নিবন্ধিত সহ ৩২টি রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন করেছে সরকার। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে মানবতার নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাখ করেছেন।’
এম এ মঞ্জুর আরো বলেন, শুরু থেকেই স্থানীয় লোকজন এসব রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে গেলেও কিছু অসাধূ সরকারি কর্তা-ব্যক্তি নিজের পকেট ভারী করার জন্য যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপন করে স্থানীয় লোকজনের ক্ষতি সাধন করে চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এমনকি এ নিয়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এলাকার লোকজনের দাবি এবার রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগে সবাইকে এক যুগে কাজ করার উপযুক্ত সময়। আর এমন সময়ে আরো নতুন করে শিবির স্থাপনের কাজটি নিয়ে এলাকাবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ জেগেছে, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা এনে আশ্রয় দিতেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৌশলে নতুন করে শিবির স্থাপন করছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে আসার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কিছু এনজিও এবং আইএনজিও চৌখালীতে ক্যাম্প তৈরি করার কাজ শুরু করেছে। কারণ তাদের ব্যবসা হচ্ছে রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা যদি এ দেশ থেকে চলে যায় তাহলে তাদের কোনো কাজ নেই। এ জন্যে লোকজনের বসতভিটা ও বনভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে চলছে এই সব আইএনজিওরা।
অপরদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম এ বিষয়ে বলেছেন, আসন্ন বর্ষার সময় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতেই নতুন করে শিবিরটি স্থাপন করা হচ্ছে।-কালের কণ্ঠ