কক্সবাজার: কপাল খুললো কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ির দরিদ্র জেলে হোসেন বহদ্দারের (৬৫)। তার জালে আট'কা পড়া ৮১টি কালো পোয়া (ব্ল্যা'ক জো ফিস) মাছ বিক্রি হয়েছে ৪০ লাখ টাকায়। সামুদ্রিক এ জাতীয় পোয়া মাছের ফৎনার দাম বেশি। বিদেশে স্যুপ হিসাবে উপাদেয় খাবার এসব ফৎনা। বিদেশে রপ্তানি করার জন্যই এসব মাছ অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন সাইরার ডেইল জেলে পাড়ার বাসিন্দা দরিদ্র জেলে হোসেনের ১০/১২ লাখ টাকা কর্জ রয়েছে। কর্জের টাকা শোধ করতে না পেরে অভাগা জেলে হোসেন গত ক’মাস ধরে হাটে-বাজারেও বের হননি। ছিলেন লোকজনের চোখের আড়ালে। ভাগ্য বলে কথা! সেই জেলে হোসেনের জালে আট'কা পড়া মাছ বিক্রির টাকায় তিনি এখন কর্জ শোধ করবেন। নির্মাণ করবেন একটি নতুন ঘর।
জানা গেছে, মাতারবাড়ি সাইরার ডেইল জেলে পাড়ার বাসিন্দা হোসেন বহদ্দার ও তার ছেলে মোজাম্মেল বহদ্দারের দু’টি ছোট আকারের মাছ ধ'রা নৌকা রয়েছে। নৌকা দু’টি নিয়েই বাপ-বেটা সাগরে মাছ ধ'রে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মাত্র ২০/২২ অশ্বশক্তি চালিত ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে গভীর সাগরে পাড়ি দিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারেন না তারা। তাই তাদের জা'ল ফেলতে হয় সাগরের তীরবর্তী এলাকায়।
মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ মাস্টার জানান, দরিদ্র জেলে হোসেনের জালে কোটি টাকার পোয়া মাছ ধ'রা পড়ার খবর পেয়ে আমি সাগর তীরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমি এসব বিশাল আকারের পোয়া মাছ দেখে অবাক হয়ে পড়ি।
তিনি বলেন, হোসেন এমনই একজন গরিব জেলে যে, তার কোনো টাকাই নেই বরফ আনার জন্যও। আমরা তড়িঘড়ি করে বরফ এনে মাছগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিই।
ইউপি চেয়ারম্যান জানান, সাগরে প্রজ'নন সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখার ফলেই সামুদ্রিক মাছের আকার বড় হয়েছে বলে জেলেরা তাকে জানিয়েছেন।
দ্বীপের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শওকত ইকবাল মুরাদ সরেজমিন মাছগুলো দেখে এসে জানান, জেলে হোসেন ও তার ছেলে মোজাম্মেল এমনই হতদরিদ্র যে, তাদের পরিবারে মোবাইল ফোনও নেই।
তিনি জানান, মাতারবাড়ি দ্বীপের একদম সাগর তীরবর্তী পানিতে মঙ্গলবার রাতে বাপ-বেটা জা'ল ফেলেছিলেন। গভীর রাতে পিতা হোসেনের নৌকাটিতে টা'ন পড়ে। একটি বড় আকারের মাছের ঝাঁক জালে আট'কা পড়ে লাফালাফি করায় নৌকাটিও ভেসে যাচ্ছিল।
আট'কা পড়া মাছ নিয়ে বুধবার সকাল ১০টার দিকে তীরে উঠে আসনে বাপ-বেটা। এরপরই চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
কক্সবাজার থেকে মাছ ব্যবসায়ীরাও খবর পেয়ে ছুটে যান মাছ কিনতে। দরদাম করে জাফর সওদাগর, সিরাজ সওদাগর ও মনু সওদাগর মিলে পোয়া মাছগুলো কিনে নেন ৪০ লাখ টাকায়। এসব মাছের সর্বনিম্ন রয়েছে প্রতিটি ১৫ কেজি এবং সর্বোচ্চ ওজন হচ্ছে ৩৭ কেজি।কালের কণ্ঠ