কক্সবাজার: কক্সবাজারে এক দিনে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার দিবাগত রাতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সোনাদিয়ার নাগু মেম্বারকে গুলি করে হত্যা:
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর আলোচিত দ্বীপ-উপকূলীয় এলাকা সোনাদিয়ার বহুল আলোচিত নাগু মেম্বারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। নিহত নাগু মেম্বার উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সোনাদিয়া ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার।
রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসি নাগু মেম্বারের উপর হামলা চালায়। হামলাকারি সন্ত্রাসিদের গুলিতে গুরুতর আহত নাগু মেম্বার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে মারা যান।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছেন, নাগু মেম্বারের নিজের ভাই বাহাদুরের ছেলে সরওয়ার ওরফে বতৈল্যার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসি তার উপর হামলা চালায়। তারা নাগু মেম্বারকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি করার পর তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপানো হয়।
নাগু মেম্বারের চাচাতো ভাই জাফর আলম সাংবাদিকদের জানান, বাড়ি লাগোয়া মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করতে যান নাগু মেম্বার। নামাজ পড়ে বাড়ির পথে একটু এগুতেই পেছন থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। গুলি খেয়েই তিনি মাটিতে ঢলে পড়েন। তারপর তাকে কুপানো হয়।
তিনি জানান, কুপিয়েই হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। স্থানীয় মুসল্লি ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত নদী পথে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
জাফর আলম বলেন, ‘সদর হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণ পরই নাগু মেম্বার মারা যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
জেলা সদর হাসপাতাল সূত্র মতে, নাগু মেম্বারের মাথায় এবং পেটে গুলি লেগেছে। এছাড়াও শরীরের বেশ কিছু অংশে ধারালো অস্ত্রের কুপের আঘাত রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করছেন, দীর্ঘদিন ধরে নাগু মেম্বারের ভাতিজা আলোচিত জলদস্যু মোকারম জাম্বু ও সরওয়ার বতৈল্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সাগরে দস্যূতায় আধিপত্য বিস্তার ও পারিবারিক সম্পত্তি নিয়েই ছিল এই দ্বন্দ্ব। তারই সূত্র ধরে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছিল।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, এক সময় নাগু মেম্বার ও জাম্বু বাহিনী একসাথে সাগরে দস্যুতা চালালেও দুই বছর ধরে তাদের সম্পর্ক খারাপ ছিল। এক পর্যায়ে জাম্বুর বাহিনী সাগরে বেপরোয়া ফিশিং বোটে ডাকাতি চালালেও ভালো পথে ফিরে আসেন নাগু মেম্বার। পরে জলদস্যূতা রোধে প্রশাসন ও লোকজনকে নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। এতেই জাম্বুদের সাথে তার সম্পর্ক আরো খারাপের দিকে যায়।
তাদের মতে, শেষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ‘পথের কাঁটা সরাতে’ নাগু মেম্বারকে নির্দয়ভাবে খুন করেছে জাম্বু বাহিনী।
প্রসঙ্গত, নিহত নাগু মেম্বার বিগত ৩ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কুতুবজোম ইউনিয়ন শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। একই সাথে তিনি ওই ইউনিয়নের সোনাদিয়া ওয়ার্ডের বেশ কয়েকবারের বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত মেম্বার।
এদিকে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল চন্দ্র বণিক সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার খবর পেয়েই তিনি নিজেই পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান চলছে।
টেকনাফে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুলকে গুলি করে হত্যা:
কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য সিরাজুল ইসলামকে (৬৮) গুলি করে হত্যা করেছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার।
রবিবার দিনগত রাত আড়াইটায় তার বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতের মরদেহ ও আহতকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কারা জড়িত এবং কেন এই ঘটনা ঘটিয়েছে এর কারণ জানা যায়নি।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের জানান, হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও জড়িতদের আটক করতে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে।
০৪ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম