তাজুল ইসলাম রানা, গাইবান্ধা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ আখের খামার এলাকার সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া এখনও থমথমে। বুধবারও পুলিশের আতঙ্কে ওই দুই গ্রামের পুরুষরা বাড়ি ফেরেনি। তাদের ঘরে নেই খাবার, সবার চোখেই এক অজানা ভয়। আবার কখন জানি হামলা হয়, এই ভয়ে কুঁকড়ে আছেন গ্রামের বাসিন্দারা।
গ্রামবাসী জানায়, সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের ইন্ধনে সাঁওতালরা বাপ-দাদার জমি ফেরত পাওয়ার আশায় ওখানে চালা ঘর তোলে। আবার সেই শাকিলের নেতৃত্বেই গত রবিবার চালানো হয় উচ্ছেদ অভিযান, ঘরে দেওয়া হয় আগুন।
বুধবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চিনিকলের উচ্ছেদ করা কিছু জমি আখ চাষের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। অন্যদিকে কিছু জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হচ্ছে। পাশেই স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। নিরাপত্তার জন্য খামারের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়াও দেওয়া হচ্ছে।
সাহেবগঞ্জ সংলগ্ন সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাঁওতাল পরিবারের নারীরা মাটির তৈরি বাড়ির উঠোনে বসে আছেন। বহিরাগত লোক দেখলেই তারা আতঙ্কিত হচ্ছেন। 'আপনারা কারা, কেন এসেছেন' জানতে চাইছেন। গ্রাম ঘুরে দেখা গেল বেশিরভাগ সাঁওতাল পুরুষই পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া।
জানতে চাইলে সাঁওতাল অধ্যূষিত মাদারপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত তরণ মুরমু, মিকাই মুরমু, রুমিলা কিসকু বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। কৃষি কাজ করে সংসার চলে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের কথামতো বাপ-দাদার জমি ফেরত পাবার আশায় ধার-দেনা করে চালা ঘর তোলা হইছিল। আবার তার নেতৃত্বেই চালানো হয় উচ্ছেদ, পুলিশের উপস্থিতি ঘরগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুনে চাল-ডাল, লেপ-তোষক বালিশ কিছুই রক্ষা পায়নি। পুলিশ গুলি করে আমাদের দু’জনকে মারলো।’
তারা আরও বলেন, ‘হামলার সময় দুর্বৃত্তরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লুট করে নিয়ে যায়। এখন সবসময় রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি, কখন না জানি আবার হামলা হয়। এছাড়াও পাওনাদারের চাপ, ধার করা সেই টাকা কী করে পরিশোধ করবো। তারপর আমাদের অনেক লোককে পুলিশ আসামি করেছে। গ্রেফতারের ভয়ে তারা পালিয়ে আছে।’
তবে ক্ষতিগ্রস্ত ওই গ্রামে ঠাকুরগাঁও মাদার তেরেসা হোম থেকে একটি টিম এসে ক্ষতিগ্রস্ত দেড়’শ পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, শাড়ি ও লুঙ্গি প্রদান করেছে। এছাড়া ঢাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রকৃত ঘটনা জানতে একটি দল পরিদর্শন করেছেন। দলে ছিলেন মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য জাকির হোসেন, রেজাউর রহমান লেলিন, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফিরোজ আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অরূপ রাহী, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বপন আদনান, সহযোগি অধ্যাপক মোশাইদা সুলতানা, আইনজীবি আ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারিদের হামলায় দুইজন সাঁওতাল নিহত হন। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কল্যাণ চক্রবর্তী বাদি হয়ে রোববার রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে ৩০০ জনকে আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। -বাংলা ট্রিবিউন।
১০ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম