সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৬:৩১

বাবা সবজি বিক্রেতা, মা গৃহীনি: ভ্যানগাড়ি চালিয়ে পড়ার খরচ যোগান মাদ্রাসার দরিদ্র ছাত্র মাহাবুর

বাবা সবজি বিক্রেতা, মা গৃহীনি: ভ্যানগাড়ি চালিয়ে পড়ার খরচ যোগান মাদ্রাসার দরিদ্র ছাত্র মাহাবুর

গাইবান্ধা : কিশোর বয়সে মাহবুর রহমান ভ্যানগাড়ী চালিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করছে। মাহাবুর এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (দাখিল, জেডিসি) পরীক্ষা দিয়েছে। অন্য ছাত্রদের মতো পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা হয়নি মাহাবুরের। অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির পর থেকে ভ্যানগাড়ী চালিয়ে রোজগারের টাকা দিয়ে চলে মাহাবুরের লেখাপড়া। এছাড়া পরিবারকেও তার কিছু সাহায্যে করতে হয়।

মাহবুর রহমান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের মজিদা দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র ও বজরা কঞ্চিবাড়ি গ্রামের সবজি বিক্রেতা মকবুল হোসেনের ছেলে।

কঞ্চিবাড়ী-পাঁচপীর সড়কের মজুমদার বাজারে দেখা হয় মাহাবুর রহমানের সঙ্গে। এ সময় মাহাবুর জানান, ‘বাবা একজন সবজি বিক্রেতা। আড়ৎ থেকে সবজি কিনে স্থানীয় কঞ্চিবাড়ী বাজারে বিক্রি করেন। বসতভিটে ছাড়া বাবার কোনও সম্পদ নেই। কোনও রকমে চলে চারজনের সংসার। মা মর্জিনা বেগম গৃহীনি। আর ছোট ভাই মাহিন (১০) দ্বিতীয় শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির পর অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হতে বসেছিলো। পরে বাধ্য হয়ে হাতে ভ্যানগাড়ী চালানো শুরু করি। আয়ের টাকায় লেখাপড়ার খরচ রহন ও পরিবারকে সাহায্যে করছি।’

তিনি আরও জানান, ‘ভ্যানগাড়ী চালিয়ে আয়ের টাকা জেডিসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিলাম। পরীক্ষা ভালো হয়েছে। এখন ভালো ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু নবম শ্রেণিতে ভর্তির টাকা ও বই, খাতা ও কলমসহ নিজের পোশাকের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। টাকা না পেলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারব না।’

মাহবুর রহমান বলেন, ‘ভ্যানগাড়ী হাতে নিলে দিনপ্রতি ১৩০ টাকা মালিককে দিয়ে হয়। রোজগারের কিছু টাকা সংসারের খরচ যোগাতে বাবার হাতে দিচ্ছি আর কিছু টাকা নিজের লেখাপড়ার জন্য মায়ের হাতে জমা করছি।’

মাহাবুর রহমান সম্পর্কে স্থানীয় শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান, ‘মাহাবুর মেধাবী ছাত্র। ভ্যান চালিয়ে নিজের লেখাপড়া খরচ  বহন ও পরিবারকে সাহায্যে করছে। লেখাপড়া শেষ করতে পারলে একদিন বড় মানুষ হবে মাহাবুর।’

মাহাবুরের বাবা মকবুল হোসেন জানান, ‘সবজি বিক্রি করে সংসার চালাই। নিজের জায়গা জমি নেই। অভাবের সংসারের কারণে ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারিনা। তাই ছেলে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।’

কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের মজিদা দাখিল মাদ্রাসার সুপার সিরাজ উদ্দিন আকন্দ জানান, ‘মাহাবুর নিজের লেখাপড়া ও বাবাকে সহযোগিতা করতে ভ্যানগাড়ি চালায়। মাহাবুরের প্রতি সব শিক্ষকের সুদৃষ্টি রয়েছে।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে