নিউজ ডেস্ক : গাইবান্ধার সাঘাটায় সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে সেখানকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিক কথিত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। উপজেলা সদর বোনারপাড়ায় গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে। পরে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হওয়ায় প্রসূতিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গাইবান্ধা শহরে নিয়ে এসে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। এতে মা রশিদা বেগম প্রাণে রক্ষা পেলেও তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ঘটনায় সিভিল সার্জন, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে গত রোববার অভিযোগ দেয়া হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু আহম্মদ আল মামুনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেন গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ।
ওই তদন্ত টিম সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ। প্রসূতির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের লিমন মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রশিদা বেগমকে গত শনিবার সকাল ১০টায় প্রসবব্যথা নিয়ে উপজেলার বোনারপাড়ার প্রাইভেট ক্লিনিক ‘মাতৃসদন কেন্দ্রে’ ভর্তি করানো হয়। সেখানে থাকাকালে ডাক্তার এবং নার্স ছাড়া বিনা চিকিৎসায় সারা দিন ওই ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করে রাখা হয়। এরই একপর্যায়ে প্রসূতির শারীরিকি পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বিকাল ৪টার দিকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মালিক আজগর আলী নিজেই একটি রুমে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানোর চেষ্টা করেন।
একপর্য়ায়ে নবজাতকের পা বের হয়ে আসলে তা ধরে ব্যাপক টানাটানি করা হয়। এতে নবজাতকের মাথা আটকে গেলে গলা থেকে দেহ ছিঁড়ে আসে। এতে রোগীর ব্যাপক রক্তক্ষরণ হলে বেকায়দায় পড়ে ক্লিনিকের মালিক আজগর আলী প্রসূতিকে গাইবান্ধা অথবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
এদিকে প্রসবের সময় বাচ্চার পা ধরে টানাহেঁচড়া করায় গলা থেকে ছিঁড়ে দেহ আলাদা হয়ে গেলে ছেঁড়া অংশ ভেতরে পুনরায় ঢুকিয়ে দেয়ায় প্রসূতি মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে শনিবার রাত ১০টায় কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই রোগীকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়া হয়।
পরে ক্লিনিকের দরজায় তালা লাগিয়ে সটকে পড়ে মালিক আজগর আলীসহ সবাই। প্রসূতি রশিদা বেগমের অভিভাবকরা তাকে নিয়ে তখন জেলা সদরে ‘গাইবান্ধা ক্লিনিকে’ এনে ভর্তি করায়। এখানে চিকিৎসকরা চেষ্টা করে মাথা এবং দেহ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত শিশুটিকে বের করে বাড়িতে দাফনের জন্য পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে অভিযোগ উঠা সেই মাতৃসদন ক্লিনিকের মালিক কথিত চিকিৎসক আজগর আলী বলেন, রোগীর লোকজনের অনুরোধেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করি। তবে আগে থেকেই পেটের ভেতর বাচ্চা মৃত ছিল বলে তার দাবি। আজগর আলী মূলত একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট। নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে এই ক্লিনিকটি চালাচ্ছেন।
এদিকে ওই প্রসূতিকে গাইবান্ধায় আনার পরে সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেন।
ওই নির্দেশপত্রের মধ্যে উল্লেখ করা হয়, ‘ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্লিনিকটি সরকারি অনুমোদন নেই, কোনো ডাক্তার বা নার্স নেই, ডাক্তার না হয়েও পুরুষ মানুষ অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসা, ডেলিভারি এবং আলট্রাসনোগ্রাম করানোর কাজ করে আসছেন আজগর আলী যা নিয়মবহির্ভূত।
ওই নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়, লিমন মিয়ার স্ত্রী রশিদা বেগমের প্রসব করার সময় নবজাতকের পা ধরে টানাহেঁচড়া করার ফলে দেহ থেকে গলা ছিঁড়ে যায় এবং বাচ্চার ওই ছেঁড়া অংশ পুনরায় ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে প্রসূতি জীবনমৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাসুদ পারভেজের সঙ্গে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টরা কোনোভাবেই নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করতে পারে না। কথিত ডাক্তার এবং ক্লিনিক মালিক আজগর আলী এখন পলাতক। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সাঘাটা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
সূত্র: যুগান্তর