মোঃ মামুনুর রশিদ মন্ডল, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে শুকনো মৌসুমে নদ নদীর পানি শুন্যতায় বিশাল এলাকা জুড়ে থাকে শুধু-ই ধু ধু বালুর চর। এ সময় জেলার নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১শ’ ২০টি চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াত ও কৃষি পণ্যসহ প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
চরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে এ অঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে আর তা হচ্ছে ‘চরে যাতায়াতে পাও, না হয় নাও’। অর্থাৎ বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাটা। এছাড়া কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন। শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ী’। এক ঘোড়া দিয়ে ছোট ছোট মোটরের টায়ারের চাকায় চলে এসব গাড়ী। চরের বালুর উপর দিয়ে ওই গাড়ীগুলো দিব্যি চলতে পারে। প্রতিটি গাড়ীতে অনায়সে ১৬ থেকে ২০ মণ কৃষি পণ্য পরিবহন করা যায়। এছাড়া চালকসহ ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী বালু চর পেরিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। বালু চর ছাড়াও এসব টাট্টু ঘোড়ার গাড়ীতে মেইন ল্যান্ডে এবং উপজেলা পর্যায়ের সড়কেও মালামাল পরিবহন করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে একটা ঘোড়ায় টানা গাড়ীতে পাকা সড়কে ৩০ মণ মাল টানা সম্ভব বলেও জানালেন ঘোড়ার গাড়ীর চালকরা।
উলে¬খ্য, জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চৈতন্য বাজার ও নিজাম খাঁ গ্রামে এসব টাট্টু ঘোড়ার গাড়ী সব চাইতে বেশি। শুধু এ দু’টি এলাকাতেই চরাঞ্চলে চলাচলকারী ৩০টি ঘোড়ার গাড়ী রয়েছে। চৈতন্য বাজারের খোরদা নামাপাড়া গ্রামের টাট্টু ঘোড়া গাড়ী চালক নজরুল ইসলাম জানান, এসব ছোট্ট আকৃতির টাট্টু ঘোড়া খুব কষ্ট সহিষ্ণু এবং মাল টানায় যথেষ্ট পারদর্শী। টাট্টু ঘোড়া বালুতে চলতে পারদর্শী বলে এসব অঞ্চলে এদের কদর অনেক বেশি। এসব ঘোড়া আকৃতিতে ছোট এবং এদের লেজ অনেক বড়। গাধার চেয়ে এদের উচ্চতা সামান্য বেশি।
তদুপরি এর আর একটি সুবিধা হলো এসব ঘোড়ার দামও বেশি নয়। মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় একটি ঘোড়া পাওয়া যায়। তবে ঘোড়া এ জেলায় পাওয়া যায় না। কিনতে হয় দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রামের খড়িবাড়ী এবং টাঙ্গাইলের তুলসিপুর হাট থেকে। সেখানে গরু ছাগলের হাটের মত টাট্টু ঘোড়ার হাটও বসে। গাড়ী চালক নজরুল ইসলাম আরও জানালেন, প্রতিদিন একটি গাড়ী থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এর মধ্যে ঘোড়ার খাবার বাবদ ব্যয় হয় ২শ’ টাকা। তবে বর্ষা মৌসুমে চরে নৌকা চলে বলে তাদের আয় কমে যায়। ইদানিং টাট্টু ঘোড়ার গাড়ীর প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও কমেছে।
৩ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস