মোঃ মামুনুর রশিদ মন্ডল , গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: বুনো পাখি ও প্রকৃত পরিবেশ সংরক্ষণে ভালবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের তরুণ এক যুবক আহম্মদ উল্লাহ এবং তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন প্রকৃত ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (নিপো)। দেশীয় স্থিতু পাখিদের সংরক্ষণ পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই ব্যতিক্রমী সে এ কাজে নিবেদিত হয়েছে। তাদের উদ্যোগে গোবিন্দগঞ্জের দরবস্ত, তালুককানুুপুর, কোচাশহর ইউনিয়নসহ গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পাখি এবং প্রকৃত ও পরিবেশ সংরক্ষণে নিবেদিতভাবে কাজ করে চলেছে আহমেদ উল্লাহর নেতৃত্বে ৩৫ জনের নিবেদিত প্রাণ তরুণ দল নিপোর নামের এই সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে পরিবেশবাদী সংস্থা এবং আহমেদ উল্লাহ নিজে এই অনন্য কাজের জন্য ২০১০ সালে পেয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় পরিবেশক পদক। ২০১১ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় পরিবেশ সংরক্ষণ সনদপত্র, ২০১২ সালে জাতীয় পরিবেশ স্বর্ণ পদক ও সনদপত্র এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড থেকে সনদপত্র পেয়েছেন। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে আহমেদ উল্লাহর নেতৃত্বে এই সংস্থার তরুণরা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রশংসনীয় অন্যতম যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো- দুইটি বিরল প্রজাতির আহত হুতুম ছানাকে সুস্থ করে তোলা। এছাড়া তালুক কানুপুর ইউনিয়নে রাঘবপুর গ্রামে ভাঙ্গা রাস্তায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ, ঝড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে যাওয়া বিরল প্রজাতির চিল ছানাকে ছোট থেকে বড় করে অবমুক্ত করা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কুইজ প্রতিযোগীতা, ধানের জমিতে পাখির দ্বারা পোকা মাকড় দমনের জন্য কঞ্চি পোতা অভিযান, রাঘবপুর গ্রামে একজন অতিদরিদ্র ব্যক্তির ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়, ভ্রাম্যমাণ রাস্তা সংস্কার কর্মসূচী, নাটোর জেলার রাজবাড়ীতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অভিযান, বিভিন্ন পাখিদের জন্য মাটির হাঁড়ি ও কলসের নিরাপদ বাসা নির্মাণ এবং অসুস্থ ও বাসা থেকে পড়ে যাওয়া পাখিদের রক্ষা করে অবমুক্ত করা অন্যতম। এছাড়াও সম্প্রতি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা দরবস্ত ইউপি মাড়িয়া গ্রাম থেকে বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার করে বন্যপ্রানী সংরক্ষন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করেন আহমেদ উল্লাহ।
পাখির জন্য অনন্য ভালবাসা থেকে মাদ্রাসায় পড়–য়া ছাত্র আহম্মদ উল্লাহ নিজের সীমিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজ গ্রামে পাখিদের বাসা তৈরী করার মাধ্যমেই সুচনা করে তার পাখি সংরক্ষণ কর্মসূচী। কেননা, সাম্প্রতিক সময়ে অবাধ বৃক্ষ নিধনের কারণে পাখিরা তাদের নিরাপদ আবাসস্থল হারিয়েছে এবং খাদ্য সংকটের কবলে পড়েছে। ফলে পাখিদের স্বাভাবিক প্রজনন বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া গ্রামগঞ্জের নতুন প্রজন্মের মানুষ পাখিদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল না হওয়ায় ব্যাপক হারে মারা যাচ্ছে পাখিরা। এছাড়া ফসল উৎপাদনে বিষাক্ত কীটনাশকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাখিদের মৃত্যুর হারও বেড়েছে।
এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে পাখিদের রক্ষায় তাই এগিয়ে এসেছে গাঁয়ের অখ্যাত এই যুবক তার সহযোগিদের নিয়ে। শুরতেই তালুককানুপুর ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী সমসপাড়া, ফকিরপাড়া, কবিরাজপাড়া, কাপাসিয়া, ছোট নাগবাড়ি গ্রামে। ২০১০ সাল পর্যন্ত নিজ খরচে এসব গ্রামে দু’হাজার কলস সে স্থাপন করে। এ পর্যন্ত এভাবে গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গাছে মাটির হাঁড়ি, কলস স্থাপন করে প্রায় ৫ হাজার পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে বলে আহমেদ উল্লাহ জানান।
উত্তরপাড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আলা উদ্দিন মিয়া ও গৃহবধূ খুরশিদা বেগমের ছেলে আহম্মদ উল্লাহ ইতিমধ্যে তার এই কাজের জন্য শুধু নিজ গ্রামেই নয়, গোটা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতেই এখন অতি পরিচিত একটি নাম। আহম্মদ উল্লাহ’র শুধু একটিই চাওয়া পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় এবং বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় পাখিদের সংরক্ষণের কাজে সকলে এগিয়ে আসবেন।
১০ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস