গাইবান্ধা থেকে : ৭১-এ মফিউজ্জামান ছিলেন টগবগে একজন যুবক। সদ্য বিবাহিত নববধূ জেলেখা বেগমকে বাড়িতে রেখে দেশপ্রেমে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এদেশ স্বাধীন হলেও জীবনযুদ্ধে তিনি আজ পরাজিত সৈনিক।
বর্তমানে বীরমুক্তিযোদ্ধা মফিউজ্জামান স্ত্রী-সন্তানের মুখে দু’মুঠো অন্ন যোগান দিতে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের পুরান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত রোস্তম আলী ব্যাপারীর ছেলে মফিউজ্জামান। মা মৃত হালিমা বেগম। বর্তমানে বয়স ৬২ ছুঁইছুঁই করছে। তিনি ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিউজ্জামান তার যুদ্ধকালীন সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় জানান, ৭১-এ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ভারতে প্রশিক্ষণে যান। সেখানে গিয়ে সাদুল্যাপুরের হিরু মিয়াকে দেখতে পান। ১১ নং সেক্টরে ভর্তি হয়ে ৪০ দিন প্রশিক্ষণ শেষে সেক্টর কমান্ডার হামিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ও সঙ্গী হিরু মিয়ার সঙ্গে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাট ও পরে মাদারগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিউজ্জামান আরও জানান, বিগত ১৩ বছর আগে তার ১ম স্ত্রী জেলেখা বেগম মারা যায়। এর পর লালমনিরহাট জেলা সদরের বাসিন্দা ফজল উদ্দিনের কন্যা ফরিদা বেগমকে বিয়ে করেন। পৈতৃক সূত্রে ১ শতক জমিতে তার বসবাস। এখানে বসবাসে সমস্যা হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে গুচ্ছগ্রামে বসবাস শুরু করেন তিনি। সেখানেও তার ঠাঁই না হওয়ায় আবার নিজ ভিটায় ফিরে বসবাস করে আসছেন।
এদিকে আবাদি জমি বলতে কিছুই নেই তার। এর ফলে ১৯৭৪ সাল থেকে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করে আসছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিউজ্জামান। মফিউজ্জামানের ২য় স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, বর্তমানে আমার স্বামীর বয়স বেশী হওয়ায় আগের মতো এখন আর তেমন রোজগার করতে পারে না। সরকার প্রদত্ত যে ভাতাদি পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। এতে করে আমরা ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছি। -এমজমিন
২৭ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস