মোঃ মামুনুর রশিদ মন্ডল , গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নিম্মাঞ্চলের ২০ হেক্টর জমির কালি বোরো ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা বাধ্য হয়েই আধা-পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এতে এ অঞ্চলের কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিন নদের তীরবর্তী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের তীরবর্তী কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের বালাসীঘাট এলাকার প্রায় ২০ হেক্টর জমির কালি বোরো ধান তলিয়ে গেছে। নারী-পুরুষ ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে পানিতে ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কাটচ্ছে। অনেকেই ধান কাটা শ্রমিক না পেয়ে কাটতে পারছেন না তার ডুবে যাওয়া ধানগুলো। শ্রমিক খরচ দিয়ে কেউ কেউ আবার অপরিপক্ত ধান কাটলেও ওই কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলেন, যদি ধানগুলো পাঁকা হতো তাহলে সমস্যা ছিল না। গরুর খাওয়ার জন্য অনেকেই ধান কাটছেন বলে তারা জানান। হামরা কৃষকরা এই ক্ষতি কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারবো না।
ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব কঞ্চিপাড়া গ্রামের কৃষক আয়নাল হক জানান, অনেক কষ্ট করে কালি বোরো ধান গারলাম বাহে, সব তো পানিত তলে গেল, হামরা কি করবো এখন? ডুবে ডুবে ধান কাটতে কাচিটাও হারালাম, হামাগড়ে দু:খ কই থুই বা কাক কই’ সেটাই ঝুজবার পাবানচি না। প্রায় ৩ মাস আগে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বালাসীঘাটের পূর্ব পাশে ২ বিঘা জমিতে (বর্ষালি) কালি বোরো ধান রোপণ করেছিলেন কৃষক আয়নাল হক। তার আশা ছিল নদীগর্ভে বিলীন হওয়া জমিতে ধানের আবাদ করে সংসারের কিছুটা অভাব দূর করবেন। কিন্ত অসময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা এ স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেল।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফুলছড়ি উপজেলায় ৭০টি চর এলাকা রয়েছে। নদীবেষ্টিত এসব চরাঞ্চলে চলতি বছর প্রায় ৩৮০ হেক্টর জমিতে কালি বোরো ধানের চাষ করেছে কৃষকরা। উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় নিচু এলাকায় রোপনকৃত কাঁচা ও আধা-পাকা ধানের জমি তলিয়ে গেছে। কৃষকরা অনেক কষ্ট করে ডুবে ডুবে ধান কাটচ্ছেন। কাঁচা ধান কেটে কি লাভ ? তাই অনেকেই ধান কাটার আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ তাহাজুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের তীরবর্তী এলাকা কালি বোরো ধানের চাষ উপযোগী। এসব জমিতে শুকনো মৌসুমে পানি শুকানোর ধানের চাষ উপযোগী। এসব জমিতে শুকনো মৌসুমে পানি শুকানোর সাথে তাল মিলিয়ে কালি বোরো ধান লাগান কৃষকরা। নদীর পানি কমতে থাকায় ধানের চারাগুলো শিকড় গজিয়ে বাড়তে শুরু করে। কিন্ত এসব জমির ফসলের কোন নিশ্চয়তা নেই। আগাম বন্যা বা অতি বৃষ্টির ফলে যেকোন মুহুর্তে তলিয়ে যেতে পারে। এবার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কৃষকের ধান তুলিয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। তবে কত হেক্টর জমি এখন পানির নিচে তা এখনো সঠিক ভাবে নির্নয় করা সম্ভব হয়নি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে চরাঞ্চলের কৃষকের আরো ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেন তিনি জানান।
ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদে হঠাৎ করেই পানি বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। গরীর পরিবারে এই ধান দিয়ে হয়তো মাস ছয়েক চলতো তাদের সংসার। কিন্ত তাদের সে স্বপ্ন ধুলিসাত করে দিলো অসময়ে বন্যা।
১৭ এপ্রিল,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস