ইন্দ্রজিৎ সরকার: কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের 'বড় ভাই' ও প্রশিক্ষক আজাদুল ওরফে কবিরাজ সাড়ে পাঁচ মাস আগেও গাইবান্ধার কামদিয়ায় তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়েছে। উদ্বিগ্ন এলাকাবাসীই এ খবর পুলিশকে পেঁৗছায়।
পুলিশ অভিযান চালানোর আগের রাতে পালিয়ে যায় সে। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের আগে সে ঢাকাতেই ছিল। এর পর থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় এ নেতা উত্তরাঞ্চলের কোথাও পালিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি একেএম মেহেদী হাসান বলেন, জেএমবি সদস্য আজাদুল ওরফে কবিরাজের ব্যাপারে খোঁজ করা হচ্ছে। এখনও তার অবস্থান জানা যায়নি। তাকে পেলে নিষিদ্ধ এ জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যাবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, গত ২৫ জুলাই রাতে কল্যাণপুর থেকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার এক জঙ্গির তথ্যমতে, আজাদুল ওরফে কবিরাজসহ ১১ জন 'বড় ভাই' ওই মেসে যাতায়াত করত। তারা নিহতদের প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিত। মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।
গত ২৫ জুলাই রাতে কল্যাণপুরের পাঁচ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর ভবনের একটি মেসে তল্লাশি করতে গেলে জঙ্গিরা ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে। সকালে ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'অপারেশন স্টর্ম-২৬'। এতে ৯ জঙ্গি নিহত হয়।
গাইবান্ধার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজাদুলের পরিবার সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের তিনদহ গ্রামে থাকে। তার বাবা জামাত আলী একজন গরিব কৃষক। তার চার ছেলের মধ্যে আজাদুল তৃতীয়। টেনেটুনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনো আজাদুল এক সময় এলাকায় মুদি দোকান চালাত।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার আগেই সে জেএমবির সক্রিয় সদস্য হয়। তখন জেএমবির গাইবান্ধা অঞ্চলের কমান্ডার জোবায়েরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করত সে। ওই সময় জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে তাকে একবার গ্রেফতারও করা হয়। জামিনে বের হওয়ার পরও সে জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
এ সময় সিরাজগঞ্জের জঙ্গিবাদে আক্রান্ত এক তরুণীকে বিয়ে করে সে। দুই বছর আগে সে গোপনে স্ত্রীকে নিয়ে গা ঢাকা দেয়। তার বাবা-ভাইদের দাবি, আজাদুল কোথায় সেটা তারাও জানেন না।
সর্বশেষ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া এলাকায় আহলে হাদিস অনুসারীদের একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতে দেখা যায় আজাদুলকে। স্থানীয় লোকজনকে 'পানি পড়া' দেওয়ার সুবাদে সে 'কবিরাজ' হিসেবে পরিচিতি পায়।
স্থানীয়রা জানান, বিকেল-সন্ধ্যায় সে মসজিদে স্থানীয় কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষা দিত। গভীর রাতে মসজিদে অচেনা লোকজন আনাগোনা করত। এদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দিত সে। বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার কয়েকজন পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ওই মসজিদে অভিযান চালায় পুলিশের একটি দল। কিন্তু কোনোভাবে খবর পেয়ে আগের রাতেই পালিয়ে যায় কবিরাজ।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর হরিনাথপুরে যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা হামলা ও জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে পুলিশের ওপর হামলাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় আজাদুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সর্বশেষ দিনাজপুরে ইসকন মন্দিরে বোমা হামলার ঘটনায়ও তার নাম এসেছে। চলতি বছরের শুরুতে লালমনিরহাট সদরের এক তরুণ নিখোঁজ হয়।
এরপর সে মোবাইল ফোনে কল করে তার বাবার কাছে তিন লাখ টাকা চায়। মোবাইল ফোনটির সূত্র ধরে প্রথমে দিনাজপুর ও পরে গাইবান্ধায় আজাদুলের বাড়িতে পেঁৗছে পুলিশ। এ সময় গ্রেফতার করা হয় তার খালাত ভাই হারুনকে। সে জানায়, আজাদুলের কাছে মোবাইল ফোনটি ছিল। পরে জানা যায়, 'নিখোঁজ' ছেলেটি ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে।
গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, আজাদুলের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি তিনি বিভিন্ন সূত্রে জেনেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে পুলিশ তাকে খুঁজছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি পুলিশকে সহায়তা করছেন।-সমকাল
২ আগস্ট, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ