গাইবান্ধা : মাত্র আড়াই মাস আগে বিয়ে হয়েছিল গাইবান্ধা সদর উপজেলার দিপালী রাণীর। কিন্তু সুখ সইল না তার। যে শরীর সোনার গয়নায় ভরে থাকার কথা, সেই শরীর লোহার শিকলে বন্দি।
বিয়ের আড়াই মাসের মাথায় পাগল উপাধি নিয়ে শিকলবন্দি হয়ে গৃহবধূ দিপালী রাণীকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। তার ওপর 'ভূতের আচর' পড়েছে বলে পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
দিপালী এখন সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের চান্দেরঘাট মাঝিপাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে। হাতে চুরি, পরনে লালশাড়ি, পায়ে রূপার নুপুরের পাশাপাশি লোহার বেড়ি লাগিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে বাড়ির আঙিনায়।
কারো সঙ্গে কথা বলে না দিপালী। মাঝে মাঝে মাথা তুলে এদিক-ওদিক দেখে মাত্র। তাদের বাড়ির উঠোনে উৎসুক মানুষের ভিড়।
বাড়ির লোকজন বলছেন, তাকে পাগলী বানিয়ে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
জামাই গণেশ বলেন, ওর (দিপালী) ওপর ভূতের আচর পড়েছে। গ্রাম্য কবিরাজ-ওঝার কাছে ঝাড়-ফুঁকসহ কবিরাজি চিকিৎসা হয়েছে। কোনো লাভ হয়নি।
নিরুপায় দিপালীর বাবা সুশীল কুমার দাস বলেন, এ মেয়েকে নিয়ে এখন কি করবো।
দিপালীরা তিন বোন এক ভাই। সবার বড় দিপালী। সোনালী ও দিপালী এবং ছোট ভাইকে নিয়ে দিপালীর কিশোরী বয়সটি সুন্দরই কাটছিল।
মাছ ব্যবসায়ী বাবার রোজগার দিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। ছোট বেলা থেকেই মেয়ে দিপালী রানী স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে গ্রামের পরিবেশে।
মা অমলা রানী জানান, ২০০২ সালের শেষদিকে কিশোরী দিপালী রানী অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। কম কথা বলা, একা জোরে গান গাওয়া, হঠাৎ করে বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার আচরণ।
মেয়ের আচরণ দেখে দরিদ্র মাছ ব্যবসায়ী সুশীল কুমার দাস চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাকে ঝাড়-ফুঁকের জন্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। কিন্তু তাতে দিপালীর তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
একপর্যায়ে কবিরাজ সুশীল দাসকে পরামর্শ দেন, মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য। তাকে জানানো হয়, বিয়ের পর ভালো হয়ে যাবে। চলে পাত্রের খোঁজ। তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে হবে, জনাজানি হলে বিয়েটা ভেঙে যেতে পারে।
গত বৈশাখ সাঘাটা উপজেলার পুটিমারি গ্রামের মৃত নাদারু দাসের ছেলে জেলে পরিবারের সন্তান গণেশ দাসের সঙ্গে দিপালীর (২২) বিয়ে দিয়ে দেন বাবা।
জামাইকে ২০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে দেন তিনি। আনন্দ উৎসবের মধ্যই দিয়ে দিপালী শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ওঠে। স্বামী মাছের ব্যবসা করে সংসার চালায়।
বিয়ের পর প্রায় দ ‘মাস ভালোই কাটছিল দিপালীর। কিন্তু এরই মধ্যে এক সময়ে দিপালী রানী তার শ্বশুরবাড়িতে নতুন করে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।
গত ১ আগস্ট দিপালীর স্বামী গনেশ চন্দ্র ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন দিপালীর হাত-পা বেঁধে তার পায়ে শিকল পরিয়ে দেয়। গ্রাম্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করায়।
কিন্তু দিপালীর মানসিক উন্নতি না হওয়ায় একদিন শিকলবন্দি অবস্থায় দিপালীকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসেন গণেশ। এরপর সে রাতেই গণেশ শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
৬ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম