এস আর সাঈদ, কেশবপুর (যশোর) থেকে : যশোরের কেশবপুরে জলাবদ্ধতা পরিস্থির আরো অবনতি হয়েছে। প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে গুলিতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। প্লাবিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জানাগেছে, কেশবপুরে হরিহর নদীর উজানের পানি ও অতি বর্ষনে সৃষ্ট সার্বিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। প্রতিদিনই নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কেশবপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এক লাখে দাড়িয়েছে।
কেশবপুর কলেজ, কেশবপুর পাইলট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আলীয়া মাদ্রাসা, মহিলা কলেজ, মধুশিক্ষা নিকেতন, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল কলেজ, বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিয়াডাঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র, গণসাহায্য সংস্থা আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যকুল ও আলতাপোল এবং বালিয়াডাঙ্গা ব্রীজে টোংঘর নির্মাণ করে ১ হাজার পরিবার বসবাস করছে।
প্রায় ২ হাজার পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজন- সহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারী ভাবে ১ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে একদিন মাত্র চাউল দেওয়া হয়েছে। বাকী ৩ হাজার পরিবারকে কোন সহযোগিতা করা হয়নি।
এব্যাপারে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যকুল টোংঘরে বসবাসকারী মশিয়ার সরদার, জাহাবাক্স সরদার, সৈয়দ আলী বাক্স, মাজিদা বেগম, জরিনা বেগম ও রিক্তা বেগম জানান, তারা কোন ত্রাণ পায়নি। খাদ্য সংকটে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের আলতাপোলে টোংঘরে বনবাসকারী সোনাভান বিবি, সাধন কুমার দাস, রঞ্জন দাস ও বাসন্তি দাস জানান, তারা কোন ত্রাণ পায়নি। খাদ্য সংকটে তারাও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এদিকে টোংঘরে বসবাসকারীদের সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ব্যাবস্থার ও নিরপত্তার চরম অভাব দেখা দিয়েছে। ১৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ প্লাবিত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিত বন্ধ রয়েছে। শুকনো মাটির অভাবে মৃত্য দুই মহিলাকে অন্য এলাকায় নিয়ে দাফন করতে হয়েছে।
এদিকে কেশবপুর শহরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কেশবপুরের মেইন সড়ক, পাঁজিয়া সড়ক, কেশবপুর সাগরদাঁড়ি সড়ক প্লাবিত হয়েছে। কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল, ভবানিপুর, হাবাসপোল, সাহা পাড়া, বালিয়াডাঙ্গা আলতাপোল, সাবদিয়া, বাজিতপুর, ব্রম্মকাটি, রামচন্দ্রপুর, রাজনগরবাঁবাবর্শি, সাগরদত্তকাটি, বেলকাটি, পাঁজিয়া, মাদারডাঙ্গা, নারায়নপুর, কৃষ্ণনগর, সারুটিয়া, মঙ্গলকোট সহ উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টিতে ৩ হাজার মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত হওয়ায় অবকাঠামোসহ ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শেখ আবু শাহীন জানান, প্লাবিত এলাকায় ১০ টি মেডিকেল টীম কাজ করে চলেছে।
কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম জানান, হরিহর নদীর উপচে পড়া পানিতে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড
প্লাবিত হয়ে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। যে সকল প্লাবিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে সেখানে ক্লাস নেয়া যাবে না বিধায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়।
তবে শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির রয়েছেন। এদিকে মানুষের দূর্ভোগের চিত্র নিয়ে যারা সংবাদ লেখেন সে সকল সাংবাদিকদের মধ্যে অন্ততঃ ১০ সাংবাদিক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাড়ি ছেড়ে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন অনেকে নিজ বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দূর্ভোগে রয়েছেন।
এমটিনিউজ/এসএস