চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় খড়িঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ক্যান্সার আক্রান্ত সাগরিকা খাতুনকে (২৫) বাঁচানো গেল না। মঙ্গলবার উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় তিনি দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
জানা যায়, সাগরিকা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র ও কৃষি দিনমজুর নাজিম উদ্দিন ও মা রাশিদা বেগমের একমাত্র মেয়ে। মেধাবী এ শিক্ষার পিতার পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের লেখা আসমানিদের মতো ভেন্নাপাতার ছাউনির একটি ঘর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। মেধাবী সাগরিকা লেখাপড়া শেষ করে ২০১৭ সালের শেষ দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক পদে যোগ দেন। তিনি ধরেন সংসারের হাল। গরিব পিতার সংসারে দুঃখের সাগরে সুখপাখির শব্দ শুরু হয়, বইতে শুরু করে সুবাতাস।
তবে হঠাৎই এক কালো মেঘে তাদের সেই সব সুখ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সগরিকার শরীরে ধরা পড়ে মরণব্যাধী ক্যান্সার। গোটা পরিবারে নেমে আসে এক ধরনের নীরবতা। মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে পিতা সব ধরনের চেষ্টা করেন। সে সময় বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। সাড়াও দেন সমাজের বিত্তবানরা। এগিয়ে আসেন তার সহকর্মী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ।
অসুস্থ সাগরিকাকে নেয়া হয় ভারতের ভ্যালোরের খ্রিষ্টান মেডিকেল কলেজে (সিএমসি)। সেখান থেকে তাকে ফেরৎ দেয়া হয়। সর্বশেষ তিনি রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্প্রতি তাকে সেখান থেকেও ফেরৎ দেয়া হয়। অবশেষে মঙ্গলবার নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। সাগরিকার মৃত্যুতে তার পরিবার, গ্রামবাসী ও উপজেলার শিক্ষক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সাগরিকার মা রাশিদা বেগম জানান, সাগরিকা অসুস্থ বোধ করলে তাকে প্রথমে যশোরে চিকিৎসা করা হয়, এরপর নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার পাকস্থলী অপারেশন করেন চিকিৎসকরা। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ভারতে নেয়ার পরামর্শ দেন। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ২১ তারিখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাগরিকাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভ্যালোরের খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজে (সিএমসি)। সেখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে চিকিৎসকরা তাকে দেশে নিতে পরামর্শ দেন। সেখান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। সর্বশেষ রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। কয়েক দিন আগে তাকে চিকিৎসকরা বাড়িতে নেয়ার পরামর্শ দেন। বাড়িতে আনার পর মঙ্গলবার সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তিনি জানান, বাদ আছর নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
সাগরিকার ভাই টিপু সুলতান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, আমার এক মাত্র বোন সাগরিকা হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে মাষ্টার্স শেষ করে চাকরিতে যোগদান করেন। দিনমজুরের কাজ করে আমাদের পিতা দুই ভাই-বোনকে মানুষ করে গড়ে তোলার চেষ্টায় প্রায় সফল। যখন পরিবারে সুখের বাতাস বইতে শুরু করল ঠিক সেই সময়েই নেমে এলো এই অন্ধকার-অমানিশা।