যশোর : এবার ফাঁস হলো গুলশান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার প্রধান নিব্রাসের আশ্রয়দাতার নাম।
ঝিকরগাছার ভালো ছেলেটি ঝিনাইদহে জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা জেনে স্থানীয়রা হতবাক হয়েছেন, যারা রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জিম্মি করে ২০ দেশি-বিদেশিকে হত্যা করেছে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের নাইড়া গ্রামের মৃত আইনুদ্দিনের ছোট ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। স্থানীয়রা তাকে ভালো ছেলে হিসেবেই জানেন।
রোকন ঝিনাইদহে অবস্থানকালে একটি মেসে ৮ জঙ্গিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এর মধ্যে গুলশান হামলায় জড়িত অন্যতম জঙ্গি নিব্রাস ইসলামও রয়েছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোকন ঝিনাইদহ শহরের সোনালী পাড়ার দারুস সালাম মসজিদের ইমাম। সেই সূত্র ধরেই তিনি মেসে জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, পড়াশুনার সুবাদে বেশ কয়েক বছর ধরে রোকন বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ি থেকে লেখাপড়ার খরচ নিতেন না, যাতায়াতও ছিল কম। এজন্য এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কম।
ঝিনাইদহ শহরের সোনালী পাড়ার সাবেক সেনা সার্জেন্ট কাউসার আলীর স্ত্রী বিলকিস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাড়ির পাশের দারুস সালাম মসজিদের ইমাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোকনুজ্জামান সম্ভবত চার মাস আগে তার বাড়িতে ভাড়াটিয়া নিয়ে আসেন।
ইমাম সাহেব তখন বলেছিলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা থাকবেন। প্রথমে দুজন ওঠে। পরে আরো ছয়জন আসে। এরপর তাদের কাছে বাসা ভাড়া দেয়া হয়।
রোকনুজ্জামানের ভাবী রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার শ্বশুর বেঁচে নেই। রোকন বাড়ি থেকে লেখাপড়ার খরচ নিত না। নিজের উপার্জনের টাকায় চলতো। মাঝে মাঝে সে বাড়িতে বেড়াতে আসতো। রোকন ভালো ছেলে। সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে।
তিনি বলেন, নিজের টাকায় স্থানীয় বাগআঁচড়া মাদরাসা থেকে সে আলিম পাস করেছে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় সে। এরপর ঝিনাইদহ শহরে থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি একটি মসজিদে ইমামতি করতো। ঈদের আগে থেকে আর বাড়িতে আসেনি সে।
ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের নাইড়া এলাকার মেম্বার হাসমত আলী গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক সরকারি কর্মচারী মৃত আইনুদ্দিনের দুই স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রীর ছোট ছেলে রোকনুজ্জামান।
তিনি বলেন, প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। রোকনুজ্জামানরা বিএনপির সমর্থক। তবে তাদের পরিবারের কেউ দলীয় কোনো পদে নেই। রোকনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে মানুষ তাকে ভালো ছেলে হিসেবে জানে।
জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা ইমাম রোকনুজ্জামানের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের নাইড়া গ্রামের মৃত আইনুদ্দিনের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ৩ ছেলে ১ মেয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ২ ছেলে ১ মেয়ে।
দ্বিতীয় স্ত্রীর ছোট ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। বড় ছেলে হাদিউজ্জামান বাগেরহাটে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। মেয়েটি মারা গেছে কয়েক বছর হলো।
রোকনুজ্জামান নাইড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। পরে স্থানীয় উড়াকোল মাদরাসা ও যশোর শহরের দড়াটানা মাদরাসা থেকে হাফেজি পাস করেন।
এরপর স্থানীয় বাগআঁচড়া মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। ঝিনাইদহে থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি একটি মসজিদে ইমামতিও করতেন রোকন।
১৫ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম