ঝালকাঠি : ‘তুমি দেখেছো কভূ জীবনের পরাজয়, দুখের দহনে করুন রোদনে তিলেতিলে তার ক্ষয়’ হ্যাঁ জীবন যুদ্ধে পরাজয়ে গ্লানীতে জর্জরিত দিন মজুর ইব্রাহিম খানের অভাবী সংসারে যার বর্তমানে হাল ধরেছে ছোট্ট শিশু পুত্র-কন্যা। ৪ মাস পূর্বে দিনমজুর পিতা ইব্রাহিমের হার্নিয়া অপারেশন হওয়ায় হয়ে পড়েছে কর্মহীন। আর বড়বোন মেধাবী ছাত্রী লিজা এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাই ৫ জনের জীবন তরী চালাতে নৌকার হাল ধরেছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জিহাদ (৯) ও তার ছোট্টবোন জান্নাত (৬)। অভাবের সংসারে সকলের মুখে অন্ন জোগাতে সারাদিন যাত্রী পারাপার করে জিহাদ।
তাকে একটু সহযোগিতা করতে পাশে দাঁড়ায় ছোট বোন ১ম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাত। জিহাদ ও জান্নাত ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের কালিআন্দার গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাড়ীর কাছেই বেতরা খালে নৌকায় যাত্রি পার করার সময় কথা হয় ছোট্ট খেয়ার মাঝি জিহাদের সাথে। আলাপকালে সে জানায় পরিবারের পরাজয়ের কাহিনী আর তার সংগ্রামী জীবনের বাস্তব গল্প।
শিশু খেয়ার মাঝি জিহাদ এমটিনিউজকে জানায়, বাবা অসুস্থ অবস্থায় ঘরে পরে আছে ঠিকমতো জুটছেনা ওষুধ। আর বড় বোন লিজা বাউকাঠি বিন্দু বাসিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাই পিতার চিকিৎসার ও ওষুধ আর এসএসসি পরীক্ষার্থী বড়বোনের পরীক্ষার খরচ জোগানো দূরের কথা দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড়ের কেউ নেই তার। সব না থাকার যন্ত্রনাকে বুকে নিয়ে সংসারের খরচ চালাতে বৈঠা হাতে তুলে নিতে হয়েছে তাকে।
প্রথমে বৈঠা হাতে নৌকা চালাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল তার কোমল দুটি হাতে কিন্তু এখন সব সহ্য করে নিয়েছে সে। বড়বোন লিজা খুবই মেধাবী তাই ৮ম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষায় তার বোন জিপিএ ৫ পেয়েছে। এরপর ৯ম শ্রেণিতে উঠে বাণিজ্য বিভাগে পরাড়াশুনা করে এবারের টেস্ট পরীক্ষায়ও সে ফার্স্ট (প্রথম) হয়েছে। তাই শিশু হৃদয় সবদিকে ভেবে ঝালকাঠি-বরিশাল-শিকারপুর সংযোগ সড়কের বেতরা খালে যাত্রি পারাপারের কাজ শুরু করে সে। আর তাকে সহযোগিতা করছে এবার প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া তার ছোট্ট বোন জান্নাত।
এমটিনিউজকে জিহাদ আরো জানায়, প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরপর দু’ভাই-বোন খেয়াঘাটে এসে নৌকায় যাত্রী পারাপারের কাজ শুরু করে। সকাল সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত খালের দু’পারে যাত্রী পারাপার করে দৌড়ে বাড়ি ফিরে দু’ভাইবোন ছোটে নিজেদের স্কুলের উদ্দেশ্যে। ১২ টায় স্কুলে উপস্থিত হয় বিকেল ৪ টায় স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে ভাগ্যে যা জোটে তাই দিয়ে দু’মুঠো ভাত উদরে পুড়ে আবার ছোটে খেয়াঘাটে। সন্ধ্যার আকাশে অন্ধকার নামার পূর্ব পর্যন্ত যাত্রী পারাপারের করতে থাকে পরিবারকে সাহায্য করার স্বপ্ন নিয়ে।
এরপরেও ভাই জিহাদ কিছু সময় কাজ করতে চাইলেও ছোট বোনটি ভয়ে কান্নাকাটি করে বলে দাদা বাড়িতে চলো। আর তাই বাড়িতে ফিরে ছোট্ট বোনটিকে নিয়ে পড়তে বসতে সে পরের দিন স্কুলের পড়া প্রস্তুত করার জন্যে। এ ভাবে শ্রম দিয়ে সারা দিনে দু’ভাইবোন আড়াইশ’ থেকে ৩শ” টাকা আয় করতে পারে। তার থেকে নৌকার মালিককে দৈনিক ভাড়া বাবদ ৫০ টাকা দিতে হয়। আর বাকি টাকা ব্যয় হয় অসুস্থ পিতার ওষুধ, পরীক্ষার্থী বোনের পড়াশুনা আর সংসারের ৫সদস্যের খরচ যোগাতে।
৮ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর