ঝালকাঠির রাজাপুরে স্থানীয় মাওলানাদের 'ফতোয়ার' ফাঁদে লাইজু বেগম (২১) নামে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূ এখন ঘরছাড়া। উপজেলার গালুয়া গ্রামের আদম আলীর স্ত্রী লাইজু বেগমকে তার শ্বশুর মো. ইসমাইল খলিফা কর্তৃক নির্যাতন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় কতিপয় মাওলানা ফতোয়া দিয়ে বলেন, 'লাইজুকে তার শ্বশুর নির্যাতনের চেষ্টা চালিয়েছে। সুতরাং লাইজু তালাক হয়ে গেছে, লাইজু আর স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে না।' এই ফতোয়া বাস্তবায়নের জন্য আ. রহিমের নেতৃত্বে কতিপয় 'মাওলানারা' লাইজু সহ সাধারণ মানুষদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত ৬ মে সোমবার সন্ধ্যাবেলা মো. ইসমাইল খলিফা পুত্রবধূ লাইজুকে ঘরে একা পেয়ে নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় মাওলানা আ. রহিম, আ. ছত্তার, গ্রাম পুলিশ সোহরাব হোসেন, মো. মৌজেআলী ও দুলালের নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন ফতোয়া দিয়ে গৃহবধূ লাইজুকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। ফতোয়া প্রদানকারীদের দাবি, 'শ্বশুর ইসমাইল পুত্রবধূ লাইজুকে নির্যাতন চেষ্টা করার কারণে লাইজু তার স্বামী আদম আলী থেকে তালাক প্রাপ্তা হয়ে গেছেন।' 'ইসলামে এমনই বিধান রয়েছে, জীবন দিয়ে হলেও এ বিধান রক্ষা করতে হবে।'
এ ব্যাপারে ফতোয়া প্রদানকারী স্থানীয় মাওলানা আ. রহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইসলামি শরিয়ত মতে যদি কোন ব্যক্তি খারাপ উদ্দেশ্যে তার নিজের মেয়েকেও স্পর্শ করে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির নিজ স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। আর এখানে লাইজুকে তার শ্বশুর নির্যাতনের চেষ্টা চালিয়েছে। সুতরাং লাইজু তালাক হয়ে গেছে, লাইজু আর স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে না।'
এ ব্যাপারে লাইজুর স্বামী আদম আলীর কাছে জানতে চাইলে আদম আলী জানায়, তার স্ত্রী লাইজু বেগমকে নিয়ে সংসার করতে তার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু হুজুরে বলছে, এখন তুমি আর তোমার স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে পারো না।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পরে গৃহবধূ লাইজু তার মামাকে নিয়ে স্বামীর গৃহে উঠার চেষ্টা করলে ফতোয়া প্রদানকারীরা লাঠি-সোটা নিয়ে বাধা দেয় এবং তাদের ফিরিয়ে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে রাজাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে, সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস