মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩, ০২:৪৫:২১

তিনটি কবর পাশাপাশি, বিলাপ করে কাঁদছেন বাবা-মা

তিনটি কবর পাশাপাশি, বিলাপ করে কাঁদছেন বাবা-মা

এমটিনিউজ ডেস্ক: পাশাপাশি তিনটি নতুন কবর। একপাশে ছোটভাই নয়ন (১৫), আর একপাশে নিজের দেড় বছরের একমাত্র শিশুসন্তান রিপা মনিকে নিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন আইরিন আক্তার (২০)। গত কোরবানির ঈদ স্বামী-সন্তানকে সাথে নিয়ে বরিশালের হিজলার শ্বশুরবাড়িতে কাটিয়েছিলেন আইরিন। ঈদের দু'দিন পর নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে বাবা-মাকে দেখতে এসেছিলেন ঝালকাঠির রাজাপুরে।

বেশ কিছুদিন আনন্দে কাটিয়ে গত শনিবার (২২ জুলাই) ভান্ডারিয়া থেকে ছেড়ে আসা ‘বাশার স্মৃতি’ নামের একটি বাসে রওয়ান করেছিলেন স্বামীর বাড়ির উদ্দেশে। সাথে নিয়েছিলেন ছোট ভাইকে। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ছোটভাই আর সন্তানকে নিয়ে লাশ হয়ে আবার বাবার বাড়িতেই ফিরতে হল আইরিনকে। বলছি, গত শনিবার (২২ জুলাই) ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় বাস দুর্ঘটনায় রাজাপুরের একই পরিবারের তিনজন নিহতের কথা।

আইরিনদের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর (বলাইবাড়ি) এলাকায়। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে আইরিনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে যাওয়া স্বামী রিপন বেপারীকে। তিনি ঘরের পাশেই কবরগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কারো সাথে কোন কথা বলছেন না।

আইরিনের বাবা নূরুল ইসলাম ও মা নূর নাহার শুধু বিলাপ করে কাঁদছেন। তাদের কান্না যেন থামছেই না। তারা নিজেদের অপরাধী ভাবছেন আর বলছেন, ‘যদি মেয়েটা আমাদের দেখতে না আসতো, তাহলে আজ ওরা বেঁচে থাকতো’। বাড়িতে যে কয়টি পরিবার আছে তারা সবাই সারাক্ষণ স্বান্তনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্লান্ত শরীর আর ভাঙা কণ্ঠে অঝোরে কাঁদছেন অইরিনের বাবা-মা।

 গত শনিবার ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার জন্য আইরিনের পরিবার ও স্থানীয়রা বাস চালককে দায়ি করছেন। এদিকে, মহাসড়কের সব গাছ কেটে ফেলা ও বিভিন্নস্থানে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর ও মাছের ঘের তৈরি করাকে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন সচেতন মহল।

এ দুর্ঘটনার পর অবশ্য জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পুলিশ বাদী হয়ে বাস চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মঙ্গলবার বিকালে রাজাপুর থেকে বাসের সুপার ভাইজার মিজানকের গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৮ এর একটি দল। 

উল্লেখ্য, গত শনিবার ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় ‘বাশার স্মৃতি’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে পুকুরে পড়ে গেলে নারী শিশুসহ ১৭ যাত্রী মারা যান। আহত হন অন্তত ২৫ জন। মৃতদের মধ্যে রাজাপুরের পাঁচজন রয়েছেন। যার মধ্যে একই পরিবারের তিনজন। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে