তৌহিদ জামান : বাড়িতে বসে নারকেলের পাতা থেকে শলাকা বের করছিলেন শেফালী দাস (৫০)। দু’রুমের সেমি পাকা বাড়ির উঠানে বসে কাজ করছিলেন তিনি। বাইরে থেকে ডাক দিতেই ভেতরে যেতে বললেন। পরিচয় শুনে বসার জন্য টুল এগিয়ে দেন। শেফালী দাসের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিষাহাটি ঋষিপল্লী এলাকায়। যে এলাকার নাম প্রায় ২০ বছর আগে বদলে রাখা হয়েছিল ‘হিলারি আদর্শপাড়া’। পরে তা লোক মুখে পরিচিতি পায় ‘হিলারি পাড়া’ নামে।
শেফালী দাসের বাবার বাড়ি যশোর সদরের চুড়ামনকাঠি এলাকায়। মায়ের বান্ধবীর ছেলে ছেলে গোবিন্দ দাসের (৫৭) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। অকপটে বললেন, বিবাহিত জীবন ও শ্বশুরবাড়ির গল্প।
শেফালী বলেন, ‘একসময় পরের বাসায় থাকতেন। প্রতিবেশীদের কাছে একটু গোবর চাইতে গেলেও তারা বিরক্ত হতেন। এখন দেখেন, আমার গোয়ালে দুটো গরু, পাঁচটা ছাগল।’ কীভাবে সেই অবস্থার উন্নয়ন তারও বিস্তারিত জানান তিনি।
পাড়ার এই নাম প্রসঙ্গে তিনি জানান, বছর বিশেক আগে ২০ এখানে এসেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। সঙ্গে ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস। হিলারি আসার আগেই এসেছিলেন ড. ইউনূস। বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় ক্যাম্প করা হয়েছিল। তিনি প্রায়ই আসতেন।
হিলারি ক্লিনটন নির্বাচন করছেন- জানেন কিছু- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে এখন টেলিভিশন আছে। শুনেছি তিনি নির্বাচন করছেন। তাদের দেশের ভোট আমরা কী করতে পারি? তবে উনি খুব ভালো মানুষ। আমার ঘরে এসেছিলেন, বসেছেন। আমাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। কোনও ঘৃণা করেননি।’
এই পাড়ারই আরেক বাসিন্দা প্রহ্লাদ দাস (৫০)। হিলারি ক্লিনটন আসার আগে তিনিও ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি করেন। তিন বছরে তা পরিশোধও করেন। সম্প্রতি ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দেন আড়াইশ’ টাকা। হিলারি ক্লিনটন ভোটে দাঁড়িয়েছেন কিনা, তা জানেন না প্রহ্লাদ। তবে মার্কিন ভোটের বিষয়েও তেমন কোনও আগ্রহও নেই তার।
হিলারি পাড়ায় যার জমিতে সমিতির ঘর তোলা হয়েছে তিনি ৮৫ বছরের নীলকান্ত দাস। হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার খবর জানেন নীলকান্ত।
তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনে তাকে দেখা যায়, এখানে এসেছিলেন তিনি। তিনি পাস করলে ভাল লাগবে।’ তার কথায় সায় দিলেন প্রতিবেশী সাবেক গ্রাম পুলিশ অজিত দাসও (৬০)।
তবে এই ঋষী পল্লীরই এক বাসিন্দা প্রতাপ দাস (৩৫) থাকেন আবাসন প্রকল্পে। তিনি বলেন, ‘এনজিওর ঋণ নিয়ে আমার ভাগ্নে লিটন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি ঋণের কিস্তি শোধ করতে তাকে এক শতক জমি বিক্রিও করতে হয়।’
বারোবাজার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজগার আলী বলেন, ‘ঋষিপল্লীর সবাই যে খুব ভালো আছেন তা নয়। অনেকেই ঋণের সুদে জর্জরিত। গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, ব্র্যাক ইত্যাদি ছাড়াও ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে সুদে টাকা নেওয়ায় কয়েকজন সব হারিয়ে এখন আবাসন প্রকল্পের ঘরে থাকেন।’
এই এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী শিরিনা আকতার। তিনি বলেন, ‘ঋষীপল্লীর তিনপাড়া মিলিয়ে আমাদের সমিতির সদস্য দেড় শতাধিক। তাদের কিস্তি আদায়ের হারও সন্তোষজনক।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের ৩ এপ্রিল মহিষাহাটি গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম দেখতে আসেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। তারপর থেকেই ওই এলাকার নামকরণ করা হয় ‘হিলারি আদর্শপাড়া’। -বাংলা ট্রিবিউন।
০৮ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম