ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের বেশির ভাগ ব্যাংক ছোট ছোট টাকা জমা নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ব্যবসায়ীরা ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন ও ২ থেকে ৫০ টাকার কাগুজে মুদ্রা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের বাক্সে লাখ লাখ টাকা জমা পড়ে খাকায় ব্যবসায়ে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
ঝিনাইদহের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতারা মালামাল কেনার সময় ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন এবং ২, ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নোট দিয়ে থাকেন; যা তারা নিতে বাধ্য থাকেন। কিন্তু ঝিনাইদহের প্রায় সব ব্যাংক ২-৫০ টাকার নোট ও কয়েন জমা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে থাকে। এতে ক্রেতাসাধারণের সাথে তাদের বাগি¦তণ্ডা শুরু হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এ সমস্যা দূর করার জন্য সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ঝিনাইদহ বাঘাযতীন সড়কের এক পাইকারি ডিমব্যবসায়ী জানান, তার দোকানে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ জন খরিদ্দার আসেন, তারা ছোট-বড় সব রকম টাকা দেন। কিন্তু তারা যখন এসব টাকা ব্যাংকে জমা দিতে যান তখন তা নেয়া হয় না। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পাইকারি দোকান মহাম্মদ আলী অ্যান্ড সন্সের মালিক মহাম্মদ আলী জানান, তারা সব টাকা নিতে বাধ্য হন, কিন্তু ঝিনাইদহের একমাত্র রূপালী ব্যাংক ছাড়া অন্য সব ব্যাংক এই কয়েন ও ২, ৫, ১০,২০ ও ৫০ টাকার নোট নেয় না। ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন। তারা সরকারের কাছে এ সমস্যার সমাধান করার দাবি জানান।
আকিজ করপোরেশন লিমিটেডের ঝিনাইদহ ডিপোর জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান অভিযোগ করেন, তাদের অফিসে ৩৩ লাখ টাকার ছোট নোট ও কয়েন বস্তাবন্দী অবস্তায় পড়ে আছে। একই অভিযোগ করেন মেছুয়া বাজারের মা স্টোরের মালিক বিশ্বনাথ বাবু ও নীলিমা স্টোরের মালিক নীলিমা বাবু।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ কয়েন ও ১ থেকে ৫০ টাকার নোট পড়ে রয়েছে। আর ব্যাংকগুলো ঘুরে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ইউসিবি, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখার ব্যবস্থাপকসহ জেলার ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ভল্টের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও তারা তাদের সাধ্যমতো কয়েন ও ছোট কাগুজে মুদ্রা গ্রহণ করছেন। তবে ভল্টে পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় সব গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে পারছেন না।
এর কারণ হিসেবে তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান জেলার সোনালী ব্যাংক তাদের জমাকৃত বিপুল পরিমাণ ছোট মুদ্রা গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে তারাও বিপাকে পড়েছেন। কখনো কখনো এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা শাখায় জমা দিয়ে আসছেন তারা। তাতে তাদের যাতায়াত খরচ পড়ছে বেশি। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক ভল্টের বাইরেও বস্তাবন্দী করে ছোট নোট ও কয়েন ফেলে রেখেছে। ধারণক্ষমতার অভাবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
রূপালী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখা প্রধান এজিএম মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান জানান, যেহেতু বৈধ মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যম, সে কারণে তা ছোট বা বড় হোক গ্রহণ করা উচিত। তারা কোনো গ্রাহককে ফেরত দেন না বলে জানান তিনি।
অন্য দিকে সোনালী ব্যাংক ঝিনাইদহ প্রধান শাখার ডিজিএম আব্দুল ওহাব জানান, ঝিনাইদহে ১৫ থেকে ১৬টি ব্যাংক আছে। প্রতিদিন ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ছোট ছোট নোট ও কয়েন গ্রহণ করা হয়। তবে সোনালী ব্যাংকের ভল্টেও বিপুল পরিমাণ টাকা জমা থাকার কারণে সম্পূর্ণ সমাধান করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা হলেন অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তাদের পাশে তারা আছেন। যত স্বল্প সময়ে সম্ভব তারা এর সমাধান করতে সক্ষম হবেন।
তিনি জানান, প্রতিটি ব্যাংককে বলা হয়েছে কেউ যাতে টাকা জমা দিতে এসে ফিরে না যান। তিনি ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার আশ্বাস দেন।
৩০ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম