ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের দুর্গাপুর গ্রামে যুবরাজের বাড়িতে আসছে শত শত মানুষ। তার সঙ্গে সেলফিও তুলছেন অনেকে। অনেকে আবার যুবরাজের সঙ্গে তোলা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব কারণে যুবরাজকে দেখতে ভিড় বেড়েই চলছে। দুর্গাপুরের এই যুবরাজ কোনো রাজপুত্র নয়, শাহ আলম মিয়ার একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। শখ করে যার নাম রাখা হয়েছে যুবরাজ। এরই মধ্যে ব্যাপারীরা যুবরাজের দাম বলেছেন ১৮ লাখ টাকা। আর মালিক শাহ আলম চাচ্ছেন ২৫ লাখ টাকা। তবে কিছু কম হলেও তিনি বিক্রি করবেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ আলম মিয়ার পৈত্রিক বাড়ি মাদারিপুরের শিবচর উপজেলায়। প্রায় সাত বছর আগে এক বন্ধুর হাত ধরে এই গ্রামে চলে আসেন। বর্তমানে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। স্কুল ও কলেজ জীবন শিবচরে কেটেছে তার। পরে অর্থ উপার্জন করতে বিদেশে যান। পাঁচ বছর সিঙ্গাপুরে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। এরপর বিদেশে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার প্রয়োজনে ৩৫টি দেশে ঘুরেছেন তিনি। পরে ঝিনাইদহে এসে গড়ে তোলেন আব্দুল্লাহ এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম। প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়ির সঙ্গে এই ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। তিন বছর হলো এই খামারে গরু লালন-পালন করেন। বর্তমানে তিনি এই খামারেই সময় দেন। এগুলো লালন-পালন করে যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালান তিনি।
শাহ আলম জানান, বর্তমানে তার খামারে সাতটি গরু আছে। সবগুলো গরুর আলাদা আলাদা নাম আছে। তিনি সবাইকে নাম ধরেই ডাকেন। আসন্ন ঈদুল আজহায় তিনি যে তিনটি গরু বিক্রি করবেন সেগুলোর নাম যুবরাজ, রবি ও সাহেব। বাকি চারটা গরু আগামী বছর বিক্রি করবেন।
তিনি আরও জানান, গরুগুলো তার খুব আদরের। তাদের সবকিছু নিজ হাতেই করেন তিনি। খাবার দেয়া, ময়লা পরিষ্কার, গোসল দেয়া সবই নিজে করেন। কিন্তু গরুগুলো অনেক বড় হওয়ায় সব কাজ করতে পারেন না। তাই তাকে সহযোগিতা করার জন্য তিনজন কর্মচারীও রেখেছেন। তাদের চিকিৎসা, তাপমাত্রা ঠিক রাখাসহ সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে হয়।
শাহ আলম জানান, তিন বছর হলো তিনি এই খামার করেছেন। যুবরাজকে তিনি খামার শুরুর সময় নিয়েছিলেন মাত্র ৬ মাস বয়স সময়ে। এখন তার বয়স ৩ বছর ৬ মাস। এই সময়ে পরিমিত খাবার আর যত্ন করে তিনি যুবরাজকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, যুবরাজকে কিনতে ইতিমধ্যে ব্যাপারীরা আসছেন। তারা ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্য বলেছেন। আমি আরেকটু অপেক্ষা করছি। প্রয়োজনে হাটে তুলবো, ২৫ লাখ টাকা দাম চাইবো। এ ক্ষেত্রে কিছু কম হলেও বিক্রি করে দিবো। শাহ আলম জানান, যুবরাজের পেছনে এখন পর্যন্ত তার ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন প্রতিদিন শত শত মানুষ তার এই গরু দেখতে আসে। এতে তার অনেক ঝামেলাও হচ্ছে, কিন্তু তারপরও তিনি খুশি।
ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, শাহ আলম মিয়া গরুর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নাম ধরে ডাক দিলেই গরু বুঝতে পারে। মালিক যে নির্দেশ দেন সেটাই পালন করে। তিনি আরও বলেন, এই যুবরাজ আমাদের গ্রামটি অনেক এলাকার মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন যুবরাজকে দেখতে।
ঝিনাইদহ শহর থেকে এসেছিলেন সাগর হোসেন। তিনি জানান, তাদের এলাকার অনেকে দেখে গিয়ে গল্প করছিলেন। এই গল্প শুনে তিনিও এসেছেন। গরুটি দেখে গরু মনে হয়নি, মনে হয়েছে এটি একটি হাতি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, গরুটির ওজন ৩৫ মণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঈদ আসতে এখনও কিছুদিন বাকি আছে। ঈদ আসতে আসতে গরুর ওজন আরও বেশি হবে।-জাগো নিউজ