এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা আর কাজের প্রতি আন্তরিকতা বদলে দিয়েছে ফলচাষি জয়নালের জীবন। চলতি বছর ২০ বিঘা জমি থেকে ২৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। ৩০ বিঘা জমির ড্রাগন ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৭০-৮০ লাখ টাকা লাভ হবে বলে জানান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাথানগাছি গ্রামের ফলচাষি আক্তারুজ্জামান।
জানা যায়, আক্তারুজ্জামান ৫০ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ড্রাগন, মাল্টা, ছাতকি কমলা চাষ করেছেন। গত বছর বাগান থেকে কোটি টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি।
আক্তারুজ্জামান বলেন, লেখাপড়া ছেড়ে বাড়িতে চলে আসার পর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সফল উদ্যোক্তার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হই। এরপর যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নেই।
২০১০ সালের দিকে সেখান থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেই। এরপর গড়ে তুলি আক্তারুজ্জামান এগ্রো ফার্ম। প্রথম দিকে ১৫ বিঘা জমিতে পেঁপে ও কলা দিয়ে চাষ করি। এর সঙ্গে ১২ বিঘা জমিতে কুল চাষ করি। ২০১৬ সালে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় পেয়ারার বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করি।
সেই চারা ৫০ বিঘা জমিতে রোপণ করি। এসব জমি অর্ধেকের বেশি বর্গা নেওয়া। একই বছর পেয়ারার সঙ্গে ২০ বিঘা জমিতে সমন্বিত পদ্ধতিতে মাল্টা এবং ১০ বিঘা জমিতে ছাতকি কমলার চারা রোপণ করি। পরের বছর বাকি ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারার সঙ্গে ড্রাগনের চারা রোপণ করি।
তিনি বলেন, চলতি বছর ওই জমি থেকে ২৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করি। এছাড়া ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রির আশা করছি। বাগান রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৭০-৮০ লাখ লাভ হবে বলে আশা করছি। আর বাগানে দৈনিক মজুরির বিনিময়ে কাজ করছেন ২৫ জন শ্রমিক।
তিনি আরও বলেন, ড্রাগনের চারা রোপণের পর ফল আসতে সময় লাগে ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত খুঁটি প্রতি খরচ পড়ে গড়ে এক হাজার টাকা। একটি খুঁটিতে এক বছরে গড়ে পঁচিশ থেকে ত্রিশ কেজি ফল উৎপাদন হয়। ড্রাগন ফলের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে কয়েক দফা ফল আসে। ফুল আসার ৩০-৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। ড্রাগন গাছে মূলত জৈব সার, সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং পিঁপড়া দমনে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
জানা গেছে, ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আক্তারুজ্জামান। তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত। শুধু লেখাপড়া করা হয়নি আক্তারুজ্জামানের। ভাইয়েরা জোর করে ঢাকা নিয়ে একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। সেখানেও ভালো না লাগায় পালিয়ে ভারত চলে যান। এরপর অবৈধভাবে ফেরার পথে বিজিবির হাতে আটক হয়ে বাড়ি ফেরত আসেন।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বলেন, আক্তারুজ্জামানের ফল চাষ পদ্ধতি প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে ফল চাষের রোগ-বালাই দমনে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তা প্রতিদিনই তার বাগান পরিদর্শন করেন। তিনি আরও বলেন, বিদেশি ফল ড্রাগন ও মাল্টা লাভজনক হওয়ায় অনেকে এখন তার কাছ থেকে চারা নিয়ে রোপণ করছেন।