ঝিনাইদহ থেকে : বয়স না হতেই ছাত্র অবস্থাতেই বিয়ে! তাও আবার প্রেম করে। এরপর স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার। তবে সেই সংসার বেশিদিন টিকে দিলো না। হঠাৎই প্রেমিকারূপী সেই বউকে যেন একঘেঁয়ে লাগতে শুরু করে।
যেকথা সেই কাজ, এবারো বেশি সময় নিলেন না, ঘরে বউ রেখে ঝুঁকে পড়লেন অন্য এক তরুণীর সঙ্গে নতুন প্রেমে (পরকীয়া!)। এরপর যে হারে বাড়ছিল নতুন প্রেমের গভীরতা, ঠিক একই হারে বাড়ছিল ঘরের স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের মাত্রাও। শোনা গেল, বেশ কয়েকদিন আগে নাকি একেবারে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই বউকে পিটিয়ে আহত করে এসেছিলেন সেই ‘বীরপুরুষ’ জামাই। কিন্তু এই ’বীরপুরুষত্ব’ যে সম্ভাব্য বিপদ দেখে নিয়ে আসছে, তা আঁচ করতে পেরে পরে পালিয়ে আসেন শ্বশুরবাড়ি থেকে। যথারীতি নিরূপায় বউ নারী নির্যাতনের মামলা করে স্বামীর বিরুদ্ধে।
এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলা শহরের হামদহ আলহেরার পাড়ায়। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর নাম উম্মে সালমা রুমী। তিনি আলহেরার পাড়ার আহসান হাবীব জোয়ার্দ্দারে মেয়ে। আর নির্যাতনকারীর নাম আতিকুর রহমান, বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার টুপিপাড়া গ্রামে। আতিকুর রেজাউল ইসলামের ছেলে ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের (ইবি) অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।
স্থানীয়রা জানায়, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি বাবা-মাকে না জানিয়েই প্রেমিকা রুমীকে বিয়ে করেন আতিকুর। বিয়ের পর পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পারে। বেশকিছুদিন পর তাদের বিয়ে মেনে নেয়। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকের দাবিতে রুমীর ওপর নির্যাতন শুরু করে আতিকুর। এক পর্যায়ে প্রথম স্ত্রী থাকার পরেও অন্য এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের জড়িয়ে পড়েন আতিকুর।
স্থানীয়রা আরো জানায়, কয়েকদিন আগে শ্বশুরবাড়ি গিয়েও রুমীকে পিটিয়ে আহত করে আতিকুর। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় রুমীর পরিবার। এরপর গত ৪ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন রুমি। এরপর থেকে উধাও আতিকুর।
তবে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতে বাড়ির অন্যান্য সদস্য না থাকার সুযোগে পরকীয়া প্রেমিকা তরুণীকে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন আতিকুর। রাতও অতিবাহিত করে দু’জনে। তবে বেরসিক পুলিশ বড়ই বাধা হয়ে দাঁড়ালো। মধুমাখা সেই রাত শেষ না হতেই ভোরে বেরসিক পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।
পুলিশ জানায়, স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় পুলিশ আসামি আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে শুক্রবার ভোরে তার বাড়ি মাগুরার টুপিপাড়া গ্রামে অভিযান চালায়। কিন্তু আসামিকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ নিজেরাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। ঘটনার সময় অন্য এক তরুণীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে রাত কাটাচ্ছিল আতিকুর। শেষ অবধি আসামিকে গ্রেপ্তারের পরে পুলিশ ওই তরুণীকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় রেখে আসে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান, রুমী নামের গৃহবধূ তার স্বামী আতিকুরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলার পরে সংবাদ পাওয়া যায় আসামি তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ সংবাদ পেয়ে শুক্রবার ভোরে অভিযান চালান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আলাউদ্দিন।
ওসি হাফিজুর রহমান আরো জানান, অভিযানকালে আপত্তিকর অবস্থায় এক নারীসহ আতিকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কুতুব উল্যাহ হোসেনের কাছে ওই নারীকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, নিজ স্ত্রীকে পিটিয়ে এসে অন্য তরুণীর সঙ্গে নারী নির্যাতন মামলার আসামি আপত্তিকর অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস