ঝিনাইদহ : ‘ভাই আপনার ভাত এসে গেছে, এই নেন।’ গত বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর শহরের একটি দোকানে খাবার বিলি করার সময় এ কথা বলেন মগরেব আলী। সত্তর বছর বয়সী ভ্যানচালক। তিনি চারটি গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই শহরের অন্তত ৭০ জন্য ব্যবসায়ীর খাবারের বাটি নিয়ে আসেন। তাঁদের খাওয়া শেষ হলে আবার বাটিগুলো নিয়ে যান। কিন্তু তখনো ক্ষুধায় তাঁর পেট জ্বলে। কে রাখে সে খবর?
মগরেব আলী বলেন, ১৬ বছর ধরে তিনি ভাত সরবরাহের এ কাজ করছেন। এ জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রত্যেক ব্যবসায়ী তাঁকে ২০ টাকা করে দেন। এই সামান্য আয়ে তাঁর তিনজনের সংসার চলে। তাই অনেক দিন আধপেটা থাকতে হয়। কোনো দিন দুপুরে খাওয়া হয় না। মগরেব আলীর বাড়ি উপজেলার জলিলপুর গ্রামে। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম। পড়ালেখা সম্ভব হয়নি। ছোটবেলা থেকেই অন্যের জমিতে কাজ করতেন। এরপর ৩৫ বছর হলো তিনি ভ্যান চালান। স্ত্রী নাদিরা বেগম, ছেলে লিটন মিয়া, দুই মেয়ে কল্পনা ও আলপনা। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও বিয়ে করে পৃথক সংসার করছেন। এখন বয়স হয়েছে। আর ভ্যান চালাতে পারেন না। তাই ভাত সরবরাহের এই কাজ নেন।
এ বিষয়ে মগরেব বলেন, মহেশপুর শহরের ব্যবসায়ীরা দুপুরের খাবারের জন্য কষ্ট করতেন। অনেকে দুই-তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি যেতেন দুপুরের খাবার খেতে। এ সময় তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হতো। এই অবস্থা দেখে তাঁর মাথায় চিন্তা আসে, তিনি ভ্যানে সবার খাবার পৌঁছে দেবেন। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা রাজি হন। এই শুরু। এখন তিনি উপজেলার নওদাগা, বৈচিতলা, বেগমপুর ও জলিলপুর গ্রাম থেকে এই খাবার সংগ্রহ করে দোকানে দোকানে পৌঁছে দেন। শহরের ঢেউটিন ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, মগরেব আলীর কারণে এখন তাঁরা দুপুরের খাবারটা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে বসে নিয়মিত খেতে পারছেন। খাবারের জন্য এখন আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি লাজুক ভঙ্গিতে বলেন, মগরেব আলী খেয়েছেন কিনা, তা জিজ্ঞেস করা হয় না।-প্রথম আলো
৬ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ