খুলনা : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন হিসাব কষছে বিএনপি। খুলনার বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামানের পরিবর্তে সেখানে আরও ‘শক্তিশালী’ প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। আর এ কারণে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পছন্দ কেন্দ্রের।
ইতিমধ্যে বিএনপির এই নেতাকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। আজ–কালের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করবে দলটি। বিএনপির কেন্দ্রের দুজন নেতা শুক্রবার সকালে এ কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রার্থী করার ব্যাপারে যেমন চিন্তা কেন্দ্রের রয়েছে, পাশাপাশি তিনি প্রার্থী হতে না চাইলে নির্বাচন নিয়ে তার মতামত জানতে চাওয়া হবে। কেননা তিনি খুলনা মহানগরের একজন নেতা ও ওই বিভাগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।
আজ সকালে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করার বিষয়ে দলের ইচ্ছার কথা শুনেছি। ঢাকায় ডাকা হয়েছে। আজই (শুক্রবার) আমি যাচ্ছি।’ খুলনা সিটির বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে গত নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে মনি তখনকার আওয়ামী লীগের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে পরাজিত করেন। এ বছরের নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন মনিরুজ্জামান। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। তবে কিছু বিবেচনায় মঞ্জুকে বেছে নেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি।
বিএনপির জন্য একটি নিরাপদ জায়গা খুলনা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের সময়ও সদরের আসনটি পায় বিএনপি। সাংসদ হন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এলাকায় দলের বাইরেও মঞ্জুর একটা আলাদা বলয় আছে। ক্রীড়াসহ সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনি।
একইভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় মনিরুজ্জামানও। তবে কেন্দ্র মনে করছে, হামলা-মামলা আর সরকারের অসহযোগিতার কারণে গত পাঁচ বছর সিটি মেয়র হিসেবে অনুজ্জ্বল ছিলেন মনি। তা ছাড়া তাকে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয়েছে। ফলে ভোটারদের হিসাব-নিকাশে মনির পিছিয়ে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
এ ছাড়া এবার খুলনায় মেয়র পদে তালুকদার আবদুল খালেক বা বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরের ছেলে শেখ সালাউদ্দিনের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মোকাবিলায় আরও শক্ত প্রার্থী দরকার বলে ভাবছে বিএনপি। যদিও বিএনপি মনে করে মনিরুজ্জামান মনির ভালো লড়াইয়ের সম্ভাবনা অটুট রয়েছে।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুও বলেন, ‘আমাদের দলের মেয়র আছে। এখানে আওয়ামী লীগ এমন কোনো শক্তি অর্জন করেনি বা আমাদের দলীয় মেয়র এমন কিছু করেননি যে তিনি হেরে যাবেন।’ তাহলে তাকে প্রার্থী করার ভাবনা আসছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, কেন্দ্র কেন ভাবছে বা কী করবে, সেটা কেন্দ্র বলতে পারবে।
বর্তমান প্রার্থীর জনপ্রিয়তার পরও পরিবর্তনের বিষয়টি আসছে কেন? জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, খুলনায় মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তনে বিএনপির ভাবনা এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ‘কৌশল’ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর দিকে লক্ষ্য রেখে ভাবা হচ্ছে। সবাই মিলে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা শুনেছেন, সিটি মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক প্রার্থী হতে চাইছেন না। তার পরিবর্তনে আওয়ামী লীগের সাংসদ শেখ হেলালের ভাই শেখ সালাউদ্দিনকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে দলটি। রাজনীতি থেকে দূরে থাকা এবং ব্যবসায়ী শেখ সালাউদ্দিন প্রার্থী হিসেবে যথেষ্ট শক্তিশালী বলে মনে করছে স্থানীয় বিএনপি। বিষয়টি কেন্দ্রকে তারা জানিয়েছে।
এই প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে মনিরুজ্জামানকে বেগ পেতে হবে। কিন্তু মঞ্জুর জন্য লড়াই সহজ হবে। বিএনপির আরেক হিসাব আছে, আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ খুলনা সদর আসনে প্রার্থী করতে চায় ব্যবসায়ী নেতা সালাম মুর্শেদীকে। তখন তার সঙ্গে মঞ্জুর লড়াইটাও বেশ কঠিন হবে। তাই বিএনপি মঞ্জুকে এখনই সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে রাখতে চায়।
মঞ্জু বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করার বিষয়ে কেন্দ্র মত পোষণ করেছে।’ মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কতটুকু আগ্রহী, জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের সিটিং মেয়র আছেন। আমার মনে হয় এখানে বিএনপির যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তিনিই জিতবেন। কেন্দ্রের নির্দেশ আমি ফেলতে পারব না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যেকোনো নির্দেশ আমাকে মানতে হবে।’
এমটিনিউজ/এসবি