খুলনা অফিস: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও নির্বাচন কমিশন সারা দেশে ছয়টি আসনের সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এসব আসনের একটি হলো খুলনার প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসন। কেন্দ্রীয়ভাবে বিরোধিতা করলেও এই আসনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা না করলেও এই আসনে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা চায় না সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হোক। এ জন্য দলটির পক্ষ থেকে জনমত গঠন ও প্রতিকার চেয়ে গণস্বাক্ষর অভিযান চালাচ্ছে।
খুলনার বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছে, তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ইভিএমের পক্ষে নন। এতে ভোট কারচুপি ও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ভোটের ফল পাল্টে দেওয়া যায়। তার পরও তারা খুলনা-২ আসনে ইভিএম চায়। তারা বলছে, খুলনা-২ আসনে ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা রয়েছে। ইভিএম হলে অন্তত কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাই হবে না। যতই হ্যাকিং হোক তাঁরা কৌশলগত কারণে ইভিএম চান।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার জন্য ইভিএম ভালো। এতে দ্রুত ফলও পাওয়া যায়। অনিয়মের আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু ভোটারদের বড় অংশ বিশেষ করে বস্তিবাসী, নিরক্ষর ও স্বল্প শিক্ষিত ভোটারদের এ সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা নেই। ফলে ভোটার উপস্থিতি ও ভোটদানে বিরূপ
পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই তারা চায় অল্প কিছু কেন্দ্রে এ পদ্ধতি চালু হোক। একই আসনের সব কেন্দ্রে ইভিএম চালু হলে ভোটাররা বিড়ম্বনায় পড়বে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গত ২৬ নভেম্বর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনের সব কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দৈবচয়নের মাধ্যমে এই ছয়টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। খুলনা-২ ছাড়া অন্য আসনগুলো হচ্ছে ঢাকা-১৩, ঢাকা-৬, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩ ও সাতক্ষীরা-২। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনের ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশের কাজ শেষ করেছে।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইভিএম নতুন পদ্ধতি। দেশের বিভিন্ন আসনে একাধিক কেন্দ্রে এর ব্যবহার হলে ভালো হতো। খুলনায় সব মানুষ এখনো বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেনি।’
নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানাতে এবং প্রতিকার আশা করে আওয়ামী লীগ গণস্বাক্ষর অভিযান চালাচ্ছে জানিয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক আরো বলেন, ‘ইভিএম বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটি আমরা মেনে নেব।’
বিএনপির খুলনা মহানগর কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, তাঁরা খুলনায় ইভিএম চান। তাতে যে ফলাফল হবে তাঁরা সেটা মেনে নেবেন। এতে হয়তো কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ছাপমারা কমবে।
প্রসঙ্গত খুলনা-২ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৯৪ হাজার ৯৯ জন। আসনটির মোট ১৫৭টি কেন্দ্রে ৬৫৩ ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। ৯৬৭টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয় জানিয়েছে।-কালের কণ্ঠ