শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:১৫:২১

'ব্ল্যাক রাইস' (কালো ধান) চাষ করে তাক লাগিয়েছেন কৃষক আবদুর রহমান

'ব্ল্যাক রাইস' (কালো ধান) চাষ করে তাক লাগিয়েছেন কৃষক আবদুর রহমান

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা গ্রামে 'ব্ল্যাক রাইস' (কালো ধান) চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক আবদুর রহমান। এই ধান, এর চাল ও ভাত কালো রঙের। জনশ্রুতি আছে, একসময় থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশের রাজা-বাদশাহরা অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই চালের ভাত খেতেন। সাধারণ প্রজাদের এটা চাষ করা ও খাওয়া নিষেধ থাকায় এর নাম হয় 'নিষিদ্ধ' ব্ল্যাক রাইস।

আবদুর রহমানের সাফল্যে এই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অন্য কৃষকরাও। তিনি জানান, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার কাছ থেকে তিনি ৪০০ টাকা কেজি দরে এই কালো ধানের দুই কেজি বীজ সংগ্রহ করেন। ওই কর্মকর্তা থাইল্যান্ড থেকে এই ধান নিয়ে এসেছিলেন। এরপর তিনি জুলাই মাসে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন এবং আগস্টে ১২ কাঠা জমিতে ধানের চারা রোপণ করেন। তাঁর ক্ষেতে ফলনও ভালো হয়েছে। ১২ কাঠা জমি থেকে প্রায় সাত মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

তিনি জানান, অন্য ধানের তুলনায় এটি চাষে বেশি লাভের আশা করছেন তিনি। কারণ, নতুন এই ধানের দাম অনেক বেশি। প্রতি কেজি তিনি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। আবদুর রহমান জানান, গত বছর ডুমুরিয়ায় একজন কৃষক কালো ধান চাষ করেছিলেন। একজন কৃষি কর্মকর্তা ও বীজ বিপণনকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিনি এ ধান সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন কৃষক তাঁর কাছ থেকে বীজ কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

এদিকে বাজারদর ভালো হওয়ায় এই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার অন্য কৃষকরাও। বেশ কয়েকজন কৃষক আবদুর রহমানের ক্ষেতে কালো ধান দেখতে যান। স্থানীয় কৃষক মনিমোহন হালদার ও হাজরা বলেন, 'আমাদের জমির পাশে আবদুর রহমান নতুন জাতের ধান চাষ করেছে। আমরাও আগামীতে এই ধান চাষ করব।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় গত বছর প্রথম ডুমুরিয়া উপজেলার গোলনা গ্রামের কৃষক ইমন খান ৩৩ শতক জমিতে কালো ধান চাষ করেন। এক বিঘা জমিতে অন্য ধান ১৫ মণ হয়, এই ধানও ১৫ মণ হয়। তবে অন্য ধানের তুলনায় এই ধানের দাম অনেক বেশি। এক বিঘা জমিতে এ ধান চাষে খরচ হয় প্রায় সাত হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন জানান, এই ধান চাষে সার ও কীটনাশক কম লাগে এবং ধানক্ষেতে পোকার উপদ্রবও কম হয়। দেশি প্রজাতির মতোই চাষ করা যায়। চারা রোপণের ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযুক্ত হয়। অন্য ধানের জীবনকাল ১৫৮ বা ১৬০ দিন। দেশি ধানের তুলনায় এই ধান বেশি লম্বা। এই ধানের ভাতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটির চাষ সম্প্রসারণের জন্য তাঁরা উদ্যোগ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, এই চালে প্রচুর পরিমাণে অ্যানথোসায়োনিন ও ফাইবার রয়েছে, যা যথাক্রমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হজমে সহায়তা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া এই চালে থাকা আয়রন ও প্রোটিন শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। ডায়াবেটিসের অনেক রোগী তিনবেলা ভাত খেতে পারেন না। কিন্তু এই চালের ভাত তাঁরা তিনবেলা খেলেও কোনো অসুবিধা হবে না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে